ছাত্র ভর্তিতে জালিয়াতির ঘটনায় শিক্ষকের নাম
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পরীক্ষায় জালিয়াতি করে শিক্ষার্থী ভর্তির চেষ্টার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীসহ আটজন গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার এই জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি এখনো ধরা পড়েনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর। এরপর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার ও ভর্তির জন্য ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারিত ছিল। ওই দিন মৌখিক পরীক্ষার সময় ছয় শিক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক করা হয়।
আটক শিক্ষার্থীরা হলেন আহসান হাবীব, শাহরিয়ার আল সানি, রিফাত সরকার, সাদ আহমেদ, রোকসান উজ্জামান ও শামস বিন শাহরিয়ার। তাঁদের মধ্যে দুই ইউনিটের দুজন মেধাক্রমে প্রথম হয়েছেন।
‘বি’ ইউনিটের সাক্ষাৎকার বোর্ডে ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক আসাদুজ্জামান মণ্ডল ও প্রভাষক সামান্থা তামরিন, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক বেলাল উদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আরিফা সুলতানা ও প্রভাষক সাইফুল ইসলাম। এই বোর্ডের সাক্ষাৎকারে অংশ নেন সন্দেহভাজন পরীক্ষার্থী শামস বিন শাহরিয়ার। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে মেধাক্রমে প্রথম হয়েছিলেন।
প্রভাষক সামান্থা তামরিন মুঠোফোনে বলেন, ‘ভর্তি-ইচ্ছুক ওই শিক্ষার্থীকে (শাহরিয়ার) আমাদের সন্দেহ হলে ব্যাপক জেরা করা হয়। একপর্যায়ে সে জালিয়াতি করে ভর্তির সুযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে। ওই শিক্ষার্থী নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।’
জালিয়াতির ঘটনায় শিক্ষক ছাড়াও এক নারীর জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তি দেন ওই শিক্ষার্থী। মুঠোফোনে সেই স্বীকারোক্তি ধারণ করা হয়। স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষার ‘ওএমআর’ (অপটিকাল মার্ক রিডার) শিট পরিবর্তন করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলামের নাম উঠে আসে। আরও এক শিক্ষকের কথা তিনি বলেছেন। তবে নাম জানেন না, দেখলে চিনবেন বলে জানিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে ভর্তির জন্য চুক্তি হয় বলেও জানান ওই শিক্ষার্থী।
‘বি’ ইউনিটের প্রশ্ন তৈরি, মডারেশন ও ফলাফল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক নজরুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ওই শিক্ষার্থী স্বীকারোক্তিতে আমার নাম বলেছে ঠিকই। কিন্তু এর সঙ্গে আমি কখনোই জড়িত নই। আমি প্রতারিত হয়েছি। একটি চক্র ওই শিক্ষার্থীকে আমার নাম বলে থাকতে পারে। আমার দুঃখ হয়, আমারই ফ্যাকাল্টির শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন।’ কোন শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন, তিনি অবশ্য তাঁর নাম বলেননি।
এ ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম বাদী হয়ে রংপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এতে ভর্তি-ইচ্ছুক ছয় শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্দেহভাজন দুই শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সজল ও গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম তাঁদের কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবাই ব্যস্ত থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে তেমন অনুসন্ধান করা হয়নি। এখন করা হবে।
এই মামলার তদন্ত করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত উপপরিদর্শক (এসআই) মহিব্বুল ইসলাম। গতকাল তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া শাহরিয়ার নামের শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ রোড খামার এলাকার এক নারীর বাসায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আটক শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তি ও ওই নারীর কথায় গরমিল পাওয়া যায়।’ তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, তাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে যে ভর্তির সুযোগ নিয়েছেন, সেটা স্বীকার করেছেন।
মামলার বাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম বলেন, জালিয়াতির অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। ছুটি শেষে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।