বিবাহ বিচ্ছেদ আর বিচ্ছেদ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সিনেমা, নাটক ও গানের জগতের বেশ কজন জনপ্রিয় তারকার বিচ্ছেদের ঘটনায় টালমাটাল ছিল বছরটি। জনপ্রিয় তারকাদের এসব বিচ্ছেদ তাঁদের ভক্ত ও শ্রোতাদের অবাক করেছে। দেখা গেছে, তারকাদের কাজ ছাপিয়ে তাঁদের ভক্তদের কাছে সাংসারিক এসব ঘটনাই আলোচনায় বিষয় ছিল। তারকাদের মধ্যে কেউ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে, কেউবা বিচ্ছেদের ঘটনায় আদালতে যান। সব মিলিয়ে বছরটি ছিল তারকাদের সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনার বছর। বছরজুড়ে হিসাব-নিকাশ সেরে অনেকে বলছেন, ‘এ যেন বিচ্ছেদের বছর!’ এভাবেই উপসংহার টেনেছেন সবাই।
টিভি পর্দায় বিয়ের ঘোষণা, এ বছরে শেষ!
কয়েক বছর ধরেই কানাঘুষা চলছিল, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস বিয়ে করেছেন। কিন্তু কিছুই যেন মিলছিল না। অবশেষে একটি টিভি চ্যানেলে এ বছর ১০ এপ্রিল উপস্থিত হয়ে শাকিবের সঙ্গে নিজের গোপন বিয়ের ঘোষণা দেন অপু বিশ্বাস। আট বছর আগের সে বিয়ের খবর যেই না জনসমক্ষে চলে আসে, তখনই দুজনের মধ্যে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দেন। তাঁদের সেই টানাপোড়েন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যায়। এ বছর ২২ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে অপুর কাছে তালাকের নোটিশ পাঠান শাকিব খান। তাঁর পক্ষে আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের অফিস থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র কার্যালয়, অপু বিশ্বাসের ঢাকার নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায় এই তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়। শাকিব ও অপুর এই তালাক কার্যকর হবে নোটিশ পাঠানোর তারিখ থেকে তিন মাস পর।
২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে হয়। বিয়ের ব্যাপারটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রেখে তাঁরা দুজন সমান তালে সিনেমার শুটিং অব্যাহত রাখেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরের একটি হাসপাতালে জন্ম হয় শাকিব ও অপুর সন্তান আব্রাম খান জয়ের।
ফেসবুকে বিচ্ছেদের ঘোষণা
বাংলাদেশের শোবিজে আদর্শ দম্পতির উদাহরণ হিসেবে চলে আসে তাহসান ও মিথিলার নাম। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এ বছর এই দুই তারকার সংসার ভেঙে যায়। বেশ কিছুদিন ধরেই তাহসান ও মিথিলার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা গেলেও অবশেষে এ বছর অক্টোবরে জানা যায় সত্যিটা। নিজেদের বিচ্ছেদের কথা স্বীকার করেন দুজনই। এ বছর ৪ অক্টোবর দুপুরে ফেসবুকে মিথিলার সঙ্গে নিজের বিচ্ছেদের খবরটি জানান তাহসান।
সেদিন তাহসান ও মিথিলা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। কয়েক মাস ধরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কোনো চাপে না থেকে আলাদা থাকার। আমরা জানি, আমাদের এই সিদ্ধান্তে অনেকে ব্যথিত হবেন। সে জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তাহসান ও মিথিলা ২০০৬ সালে ৩ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আইরা তেহরীম খান তাহসান-মিথিলা দম্পতির একমাত্র সন্তান। তাহসান-মিথিলার পরিচয় গানের মাধ্যমে। তাহসান তখন ব্ল্যাক ব্যান্ডের গায়ক। এক বন্ধুর সঙ্গে তাহসানের আড্ডায় গান শুনতে যান মিথিলা। এরপর পর ধীরে ধীরে সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়। বিয়ের পর এ জুটি একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’ নাটকসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন এই জুটি। নাটক ছাড়াও এ জুটি একসঙ্গে গানও গেয়েছেন।
বিচ্ছেদ নিয়ে লুকোচুরি
বিচ্ছেদ নিয়ে বেশ কিছুদিন লুকোচুরি করার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি গায়ক ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদের। চট্টগ্রামের মেয়ে রেহান চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় সংসারও টিকিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। হাবিবের সঙ্গে সংসার ভাঙার জন্য রেহান মডেল পিয়া বিপাশা ও তানজিন তিশাকে সরাসরি দায়ী করেন। তবে বেশি দায়ী করেন তানজিন তিশাকে। এই দুই মডেলকে হাবিব অনেক বেশি প্রশ্রয় দিয়েছেন বলেও দাবি রেহানের। ২০১১ সালে ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের মেয়ে রেহান চৌধুরীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় গায়ক ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদের। পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে ২০১২ সালে ২৪ ডিসেম্বর তাঁদের ঘর আলোকিত করে আসে একমাত্র সন্তান আলিম। এ বছর ১৯ জানুয়ারি তাঁদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে প্রথম লুবায়না নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন হাবিব। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে তাঁর।
১০ বছরের প্রেম, ১৩ দিনে শেষ!
গায়িকা মিলার সঙ্গে বৈমানিক পারভেজ সানজারির প্রেমের সম্পর্ক ১০ বছরের। কিন্তু ১০ বছরের প্রেমের সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র ১৩ দিন। বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় মতের অমিলের কারণে তাঁরা দুজন আলাদা থাকা শুরু করেন।
মিলার মতে, ‘১০ বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জানতে পারি, তার আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে। বুঝতে পারি, সে আমাকে ঠকাচ্ছে। যে লোক এত দীর্ঘ সম্পর্কের পরও আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে, তার সঙ্গে আমি থাকতে পারব না।’
চলতি বছর ১২ মে পারিবারিকভাবে প্রেমিক পারভেজ সানজারিকে বিয়ে করেন পপ গায়িকা মিলা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। আর গত ৬ অক্টোবর শুক্রবার রাতে ফেসবুকের ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে এ দুঃসংবাদ জানান মিলা নিজেই।
স্বামীর বিরুদ্ধে বাঁধনের মামলা
২০১০ সালে নিজের থেকে ২০ বছরের বড় মাশরুর সিদ্দিকী সনেটকে ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেত্রী ও মডেল আজমেরী হক বাঁধন। প্রায় চার বছর সংসার করার পর ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয় তাদের। বাঁধন-সনেট দম্পতির একটি মেয়ে রয়েছে। বিচ্ছেদের পর মেয়েকে নিয়ে একাই থাকেন বাঁধন। তবে দীর্ঘদিন চাপা থাকা এ খবর প্রকাশ্যে আসে এ বছর আগস্টে। গত ৩ আগস্ট মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে স্বামী সনেটের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন বাঁধন। তখনই সবকিছু প্রকাশ্যে আসে।
চুল টানাটানি চাননি বলেই বিচ্ছেদ
দুই বছরে ভেঙে যায় মডেল ও অভিনয়শিল্পী স্পর্শিয়া ও নির্মাতা রাফসানের সংসার। গত ২১ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাজী অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন।
বিচ্ছেদের কারণ প্রসঙ্গে স্পর্শিয়া বলেন, ‘হুট করেই ২০১৫ সালের অক্টোবরে দুজন (রাফসান আহসান ও স্পর্শিয়া) মিলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। এক বছর একসঙ্গে ছিলাম। সংসার করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। গত বছর নভেম্বরের দিকে মনে হচ্ছিল, না, আমরা আর একসঙ্গে থাকতে পারব না। তাই আমি রাফসানের কাছে ডিভোর্স চাই। আমি চাই না, এটা নিয়ে এখন চুল টানাটানি হোক। অথবা আমার সঙ্গে রাফসানের দেখা হলে যাতে কুশল বিনিময় করতে পারি বা ওর দিকে কেউ আঙুল তুলে কথা বলুক—এসব আমি মোটেও চাই না। ও আমাকে সম্মান করে, আমিও তাঁকে সম্মান করি। এটা বজায় থাকুক। কারণ, টেনে এনে চুলোচুলি করতে চাই না।’
২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর স্পর্শিয়ার সঙ্গে তাঁর বাগদান হয়। ১ অক্টোবর তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। একটি অনলাইন শপের ভিডিওচিত্র নির্মাণের সময় রাফসান এবং স্পর্শিয়ার বন্ধুত্ব হয়। তাঁরা প্রেম করেছেন চার মাস। রাফসানের মা অসুস্থ হওয়ায় তাঁরা দ্রুত বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের পাঁচ দিন পর রাফসানের মা মারা যান।
বদলে গেছে ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’
ভালোবেসে বিয়ে করার পর শখ আর নিলয় উত্তরায় সংসার শুরু করেন। শুরুর দিকে তাঁদের সংসার বেশ ভালোই চলছিল বলে জানান তাঁরা দুজন। একটি টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করতে গিয়ে খুব কাছাকাছি চলে আসেন শখ-নিলয়। এরপর ধীরে ধীরে তা প্রেমে পরিণত হয়। প্রেমের সম্পর্কও খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ সিনেমা মুক্তির পর তাঁরা দুজন আবার কাছাকাছি আসেন। এরপর বিয়ে করে সংসার শুরু করেন দুজন।
গত বছর ৭ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ বিয়ের কাজটি সেরে নেন শখ ও নিলয়। বিয়ের খবর জানাজানি হয়ে গেলে ফেসবুকে ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ পরিবর্তন করে ‘ম্যারিড টু নিলয় আলমগীর’ লেখেন। এখন আবার শখের ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ সিঙ্গেল। অন্যদিকে নিলয়ের সম্পর্কের জায়গায়ও নেই শখের নাম। শুধু তা-ই নয়, নিলয় তাঁর ফেসবুক আইডির ‘অ্যাবাউট’ অপশন ‘গোপন’ করে রেখেছেন। তবে এ বিষয়টি নিয়ে শখ ও নিলয় কেউ সরাসরি কিছু বলেননি।
শখ ও নিলয়ের এমন স্ট্যাটাস দেখে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে তাঁরা এখন আর একসঙ্গে নেই। অনেক দিন ধরে এই দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চলছিল। সহকর্মী শিল্পী ও পরিচালকের কেউ কেউ এমনটাও বলছিলেন, কয়েক মাস ধরে তাঁরা দুজন নাকি এক ছাদের নিচেও থাকছেন না। গত ১৭ জুলাই বিচ্ছেদের কথা স্বীকার করেন নিলয়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এখনো ডিভোর্স হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে। নানা কারণেই আমরা দীর্ঘদিন আলাদা থাকছি।’
পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ
বিয়েটা করেছিলেন প্রেম করেই। কিন্তু রায়হান খান ও নোভার সংসারে বিচ্ছেদের সমাধান করতে আদালতে পর্যন্ত গড়ায়। গত ২৬ আগস্ট ঢাকা জজকোর্ট কাজি অফিসে তাঁরা দুজনই তালাকনামায় স্বাক্ষর করেন। জানা গেছে, পারস্পরিক সম্মতিতে এই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। দেড় বছর প্রেমের পর ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর তাঁরা বিয়ে করেন।
বিচ্ছেদের কারণ প্রসঙ্গে রায়হান খান বলেন, ‘আমি ছিলাম বাড়ির ছোট ছেলে। কখনোই কোনো দায়িত্ব নিতে হয়নি। কিন্তু সংসার মানেই অনেক দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়। এটা পুরোটাই ছিল পারিবারিক। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল অর্থনৈতিক ব্যাপারও। ঝগড়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। আমরা এই দূরত্বকে বাড়তে দিতে চাইনি।’
নোভা বলেন, ‘আমি ডাল-ভাত খাব, কিন্তু কেউ আমাকে অপমান করবে, এটা সহ্য করব না। পাওনাদার কেন আসবে? রায়হানের অপরিকল্পিত জীবনযাপনের কারণে আমাকে নানাজনের কাছ থেকে অপমান হতে হয়েছে। আমার কাছে যা আছে, তাই নিয়ে আমাকে পরিকল্পনা করতে হবে। কিন্তু রায়হানের স্বভাব তেমন নয়। এটাই আমাদের মাঝে ঝামেলা তৈরির প্রথম কারণ।’