জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা যাবেন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তুলনামূলক কম প্রতিষ্ঠিত (নতুন) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেষণে পাঠানোর সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে বলেছে সংস্থাটি।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন আরও বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, প্রতিবেদনটি অতি সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
সুপারিশের কারণ হিসেবে ইউজিসি বলছে, অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। ফলে সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
২০১৬ সালের তথ্য নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউজিসি উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করে। সরকার সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়।
দেশে বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪২টি। তবে ৩৭টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ এবং শিক্ষক ১৩ হাজার ৭২। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ২০।
ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এখন প্রতিনিয়ত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। জামালপুর ও নেত্রকোনায় আরও দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুণগত মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। দলীয়করণ করতে গিয়ে আরও কম যোগ্য ব্যক্তিরাও শিক্ষক হচ্ছেন। সেগুলোতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকও হাতে গোনা। ফলে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পাচ্ছেন না। ইউজিসি মনে করছে, পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রয়েছেন। সেখান থেকে কিছুসংখ্যক শিক্ষককে নতুনগুলোয় পাঠালে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ইউজিসি নতুন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর পদগুলোয় স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে বলেছে। সংস্থাটি অবসরপ্রাপ্ত অথবা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেষণে শিক্ষকদের ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়ে তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া অভিজ্ঞ শিক্ষকের ঘাটতি পূরণে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন, তাঁদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে ইউজিসি। এ জন্য প্রয়োজনে ইউজিসি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম-ঠিকানার (ডাইরেক্টরি) তালিকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে।
ইউজিসি বলছে, জাতীয়, উন্মুক্ত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক নতুন সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকসংকট বিরাজ করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত প্রভাষক ও কনিষ্ঠ শিক্ষক দিয়ে চলছে। এ ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা অধ্যাপকদের বক্তৃতা (লেকচার) ভার্চ্যুয়াল ক্লাসের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া দেশে দক্ষ শিক্ষক ও গবেষক (ফ্যাকাল্টি) তৈরির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্বমানের একটি ‘গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়’ অতি দ্রুত করা দরকার। যেখানে শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হবে এবং দেশের আর্থসামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করবে। ইউজিসি বলছে, বর্তমানে যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তারা প্রয়োজনীয় উচ্চ ডিগ্রিসম্পন্ন জনবল তৈরি করতে পারছে না।
এসব সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবগুলো খুব ভালো। তবে নতুন ‘গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়’ করা বেশ জটিল হবে। তার চেয়ে বরং প্রতিষ্ঠিত যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেখানে আলাদা করে গবেষণার জন্য অধ্যাপকেরা থাকবেন, তাঁদের মূল কাজই হবে গবেষণা করা ও করানো। তাঁরা মাঝেমধ্যে ক্লাস নেবেন। আর প্রেষণে পাঠানোর জন্য শিক্ষকদের প্রথমে পছন্দ দিতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যবেক্ষক
দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৮৬টির কার্যক্রম চলছে। ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায়ই দেখা যায়, বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে না। অনেকগুলোতে আচার্যের নিয়োগ করা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। প্রতিবছর এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিরীক্ষিত বার্ষিক হিসাব ইউজিসিতে জমা দেয় না, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব কার্যকলাপ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইউজিসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ইউজিসির একজন সদস্য বা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ বছরের শিক্ষকতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞ একজন শিক্ষাবিদকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা যাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারেন, সে জন্য নীতিমালা করতে বলেছে ইউজিসি।