অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদে ব্যাপক অভিযান
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পুলিশের দুজন সদস্য এক ব্যক্তির দুহাত ধরে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছেন। চারপাশে টেলিভিশনের ক্যামেরা ও উৎসুক জনতার ভিড়। তাঁকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এটাই সবার প্রশ্ন। সিটি করপোরেশনের দেয়াল লিখন, পোস্টার ও বিলবোর্ড নীতিমালা ভঙ্গ করায় তাঁকে জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় তাঁকে আটক দেখানো হয়।
এমন দৃশ্যের মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবৈধ ব্যানার, বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। উচ্ছেদ অভিযান চলে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এ সময়ে ফার্মগেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গ্রিন সুপার মার্কেট এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গ্রিন সুপার মার্কেট এলাকায় নিয়ম না মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ব্যবহারের জন্য মেসার্স আশিক স্যানিটারি ও নিউবাথ প্রেশার—এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নিউবাথ প্রেশার প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসমাইল হোসেন জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় তাঁকে আটক দেখানো হয়। পরে জরিমানার টাকা পরিশোধ করলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন হারে জরিমানা করা হয়। এ এলাকায় মোট নয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অবৈধ সাইনবোর্ডের বিষয়ে গ্রিন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. সাইফুল্লাহ বলেন, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। তবে এ বিষয়টি সম্পর্কে তাঁদের সময় দিলে তাঁরা এসব সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতেন বলে তিনি দাবি করেন।
জরিমানার বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম অজিয়র রহমান বলেন, সুন্দর রাজধানী নির্মাণের জন্য এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। আজ ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলো, পরবর্তী সময়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালিত হবে।
দুপুর সাড়ে ১২টার পর উচ্ছেদকারী দলটি ফার্মগেট এলাকায় অভিযান শুরু করে। এ সময় অপো মোবাইলের দোকানে অভিযান চালান আদালত। অপো মোবাইল দোকানের সামনে ও ওপরে বিশাল বড় বড় দুটি সাইনবোর্ড থাকায় আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় দোকানের দায়িত্বে থাকা লোকেরা সাময়িকভাবে দোকানের কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।
এদিকে ফার্মগেট এলাকায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, ডেন্টাল কেয়ার ও খাবারের দোকানের ওপর স্থাপিত সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলা হয়। বিসিএস কনফিডেন্স কোচিং, ইউনিএইড, কর্নেল একাডেমি, ই-হক এবং ওরো ডেন্টালসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে সিটি করপোরেশন। এ সময় উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। ভিড়ের মধ্য থেকে একজন পথচারী বলছিলেন, ‘হেরা ব্যবসা করব ভালো কথা। কিন্তু রাস্তাঘাট দখল করব ক্যান? সব ভাইঙ্গা ফালাক।’
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশনের বিপুল প্রস্তুতি ছিল। অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণের পর সেগুলো পরিবহনের জন্য সিটি করপোরেশনের চারটি ট্রাক নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া একটি বুম ট্রাক ও একটি এক্সকাভেটরও ছিল। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী, উচ্ছেদকর্মী ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। এক ভ্যান পুলিশ অভিযানে সহায়তা করার জন্য সার্বক্ষণিক সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিল।