কোরালের ফাঁকেও আটকে আছে কত কিছু

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: টেকনাফ থেকে আমাদের জাহাজটা যখন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঘাটে পৌঁছাল, তখন আরও দুটি জাহাজ ভিড়েছে সেখানে। পিল পিল করে মানুষ নামছিল। পা ফেলার জায়গা নেই। সবাই ওর সৌন্দর্য দেখতে চায়। আমরা যে রিসোর্টটায় উঠলাম, তা একদম দ্বীপের পেছনের দিকে সৈকতের ধারে। এ দিকটায় মানুষ বেশ কম। স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে চাইলাম এত মানুষ এল, গেল কোথায় সবাই? তাঁরা জানাল, বেশির ভাগ পর্যটক দিনে দিনে এসেই চলে যান।

দ্বীপের পেছনের দিকটা সুনসান, আভিজাত্য আছে। নীল জলে সূর্যের খেলা আর কোরালের সাজানো তট থেকে চোখ ফেরানো দায়। সমুদ্রের গর্জন যেন ডেকে নেয় সবাইকে। নীল পানির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় চোখ আটকায় পানিতে ভেসে থাকা কোমল পানীয়ের বোতলের দিকে। থমকে যেতে হয়। খারাপ লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। নজর দিলাম সৈকতের আসে পাশে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চিপসের প্যাকেট, কোমল পানীয়ের বোতল। কোরালের ফাঁকেও আটকে আছে কত কিছু। অস্থিরতা তৈরি হয়। কী করছি আমরা? কীভাবে শেষ করছি সুন্দরকে?

আমরা যে রিসোর্টটাই উঠেছিলাম সেটাতেই জায়গায় জায়গায় ময়লা ফেলার ঝুড়ি ছিল। ঘুরে দেখলাম প্রায় সব রিসোর্টেই এই ব্যবস্থা আছে। সৈকতে খুব বেশি না থাকলেও অল্প বিস্তর ব্যবস্থা আছে। তবুও যেন সৈকত ও সমুদ্রে ময়লা ফেলার নেশাটা আমাদের কাটে না। সবাই ফেলছে। অদ্ভুত সুন্দরের মাঝে কালিমা যেন আমাদের লেপন করতেই হবে।

সঙ্গে থাকা বড় ভাই জানালেন, বছর দশেক আগেও এমনটা ছিল না। অবশ্য সে সময় মানুষও আসত কম। ময়লাও কেউ ফেলত না। বললেন, কোরালের ফাঁকে ফাঁকে এই সব প্যাকেট, বোতল এগুলো হচ্ছে ‘গুপ্ত মাইন’। জমতে জমতে কোনো এক সময় বিস্ফোরিত হবে। ধ্বংস হবে সৌন্দর্য।

আসলেই বুঝে না বুঝে আমরা প্রতিনিয়ত নষ্ট করছি আমাদের আশপাশের পরিবেশ। এগুলো যে বুমেরাং হয়ে আমাদেরই আঘাত করবে এ বোধ কেন আমাদের হচ্ছে না? আমরা বেড়াতে যাচ্ছি সৌন্দর্য দেখতে। মনে দুদণ্ড শান্তি পেতে। অথচ বেড়ানোর ওই পরিবেশটা আমরা ঠিক রাখছি না। বেড়ানোর সেই পরিবেশের যত্ন আমরা নিচ্ছি না।

নতুন বছর এল। কত-না হিসাব কষতে বসেছি একেক জন। কেমন গেল বছরটা, কী পেলাম, কী পায়নি। নতুন বছর কেমন যাবে? ভালোর প্রত্যাশাই করি সব সময়। সেই সঙ্গে প্রতি বছরই আমরা বলি আগের মতো নেই সবকিছু। প্রতি বছরই মনে হয়, আগের বছরের চেয়ে বাসার সামনের রাস্তাটা আরও নোংরা হয়েছে। অফিসে যাওয়ার পথটায় দুর্গন্ধ বেড়েছে। এতটুকুই। মনে আসে, বোধোদয় হয় না। নষ্টের মাত্রাটা বাড়ছে বছর বছর। ‘গুপ্ত মাইনে’ ভরে যাচ্ছে দেশ।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে একটি দেশের পরিবেশ রক্ষায় সরকারের ভূমিকা ব্যাপক। প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। আইন ও শাস্তির আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। তবে এটাও ঠিক আমাদের মানসিক শিক্ষার প্রয়োজন। আমরা নিজেরা যদি যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলি, সচেতন হই তবে যে ফল পাওয়া যাবে তা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বছরের হিসেব কষার সময় একটি সঠিক কাজ যুক্ত হবে প্রত্যেকের ঝুলিতে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ