ফেলানী হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে ফেলানী খাতুন হত্যা মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। হত্যার সাত বছর কেটে গেলেও ন্যায়বিচার নিয়ে এখনো সন্দেহ প্রকাশ করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) যে জওয়ানের গুলিতে ১৫ বছরের ফেলানীর মৃত্যু হয়েছিল, সেই অমিয় ঘোষ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। বিএসএফের বিশেষ আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস দেন। এ নিয়ে হইচই হলে বিএসএফের রায় পুনর্বিচার করার সিদ্ধান্ত হয়। পুনর্বিচারেও অমিয় ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। এরপর ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলা করা হয়। দুবার শুনানি ছাড়া সেই মামলারও কোনো অগ্রগতি নেই।
আজ রোববার ফেলানী হত্যার সাত বছর পূর্ণ হবে। গতকাল শনিবার কুড়িগ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, মা জাহানারা খাতুন প্রতিদিন বাড়ির পেছনের দিকটায় ফেলানীর কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তিনি আশায় বুক বেঁধে আছেন একদিন এ হত্যার বিচার হবে। জাহানারা খাতুন বলেন, অমিয় ঘোষের ফাঁসি হলে ফেলানীর আত্মা শান্তি পাবে।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘আমি ভারত সরকারের কাছে মেয়ে ফেলানী হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিচারের তারিখ বারবার পরিবর্তন হওয়ায় আমরা হতাশ।’
মামলাটি করেছিলেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের সাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায়। গতকাল শনিবার কিরীটি রায় এই মামলা সম্পর্কে কলকাতা থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘দুবছরে মাত্র দুবার শুনানি হয়েছে। শেষবার সম্ভবত মাস তিনেক আগে। বিচারপতি সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন।’
কিরীটি রায় বলেন, ‘বিএসএফ হাত ধুয়ে ফেলেছে। তাদের চোখে জওয়ান অমিয় ঘোষ নির্দোষ। অথচ তাঁর গুলিতেই ফেলানীর মৃত্যু হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তাই ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণই আমাদের দাবি। সুপ্রিম কোর্টের এত সময় নেওয়ারও কোনো কারণ নেই। কারণ মামলাটি মোটেও জটিল নয়।’ তিনি জানান, জাতীয় মানবাধিকার রক্ষা কমিশন পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই টাকাও ফেলানীর পরিবার পায়নি।
দুবছর আগে এই মামলাটি রুজু হওয়ার সময় আইনজীবী ছিলেন মানবাধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কলিন গনজালভেস। গতকাল তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পর কিরীটি রায় মামলাটির দায়িত্বে আমাকে আর রাখেননি। যত দূর জানি, মামলাটির বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।’
এদিকে মামলাটি সম্পর্কে বালাদেশের আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘১৮ জানুয়ারি মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা আছে। ওই দিন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামের দায়ের করা পৃথক দুটি রিট মামলা একসঙ্গে শুনানির কথা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আশা করি।’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ভারতীয় দালালদের সহায়তায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা নুরুল ইসলামের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল ফেলানী। মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে ফেলানী মারা যায়। এরপর তার দেহ অন্তত পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশ আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনার মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজশুরু হয়। অথচ এক মাস না পেরোতেই ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন বিএসএফের বিশেষ আদালত। এরপর থেকে আইনি লড়াই চলছে।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এক বিবৃতিতে গতকাল বলেছে, ফেলানী হত্যায় জড়িত বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষ এবং নির্দেশদাতা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কোনো শাস্তি হয়নি। ফেলানী হত্যা ছিল বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের ওপর ভারত সরকারের আগ্রাসী ভূমিকার একটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।