বিশ্ব ইজতেমা শুরু, দুই মুসল্লির মৃত্যু
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের ইজতেমা। ইজতেমা শুরু হওয়ার আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দুজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগে ইজতেমাস্থলে এবং অপরজন ইজতেমায় যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তা পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মারা যান।
আজ ইজতেমাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ইজতেমা ময়দানের দিকে মুসল্লির স্রোত নেমেছে। ফজরের নামাজের পর জর্ডানের মাওলানা শেখ ওমর আম বয়ান শুরু করেন। তাঁর বয়ানটি বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল মতিন।
তাবলিগ জামাতের দিল্লির আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর যোগ দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে কঠোর নিরাপত্তায় আজ এই ইজতেমা শুরু হলো। ইতিমধ্যে আসা দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের জন্য গতকাল বাদ ফজর থেকেই প্রস্তুতিমূলক বয়ান শুরু হয়। ইজতেমা উপলক্ষে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী রোববার জোহরের নামাজের আগেই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য (মুরুব্বি) গিয়াস উদ্দিন জানান, আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। মাঝে চার দিন বিরতির পর ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব এবং ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন দেশের ১৪ জেলার মুসল্লি।
আয়োজক কমিটির অপর সদস্য গিয়াস উদ্দিন জানান, ইজতেমায় দুই পর্বে ২৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। প্রথম পর্বে ১৪ জেলা ও দ্বিতীয় পর্বে ১৩ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। এর মধ্যে ঢাকার মুসল্লিরা দুই পর্বেই অংশ নেবেন। বাকি ৩৭ জেলার মুসল্লিরা এ বছর নিজ নিজ জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমায় অংশ নেবেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ইজতেমার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে শেষ করার লক্ষ্যে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে র্যাব নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন আর রশীদ জানান, অন্যবারের চেয়ে এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মো. গাউস আল মুনির জানান, ইজতেমা চলাকালে বিশেষ ট্রেন চালু হবে এবং প্রতিটি ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে দুই মিনিট করে যাত্রাবিরতি করবে।
প্রথম পর্বে ১৪ জেলার মুসল্লিদের জন্য ২৮ খিত্তা
ইজতেমা ময়দানে প্রতি জেলার মুসল্লিদের অবস্থানের আলাদা স্থানকে খিত্তা বলে। প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী জেলাগুলোর খিত্তা হলো ঢাকা (১ থেকে ৮, ১৬, ১৮, ২০ ও ২১ নম্বর), নারায়ণগঞ্জ (১২ ও ১৯), মাদারীপুর (১৫), গাইবান্ধা (১৩), শেরপুর (১১), লক্ষ্মীপুর (২২-২৩), ভোলা (২৫-২৬), ঝালকাঠি (২৪), পটুয়াখালী (২৮), নড়াইল (১৭), মাগুরা (২৭), পঞ্চগড় (৯), নীলফামারী (১০) ও নাটোর (১৪)। প্রয়োজনীয় মালপত্র সঙ্গে নিয়ে দলে দলে মুসল্লিরা ময়দানে গিয়ে যাঁর যাঁর খিত্তা ও কামরায় অবস্থান নিচ্ছেন এবং বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে সময় কাটাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ এবং দেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা ইসলামি উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ়করণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আমি আশা করি, এই মহান ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে।’
দুই মুসল্লির মৃত্যু
ইজতেমায় যোগ দিতে এসে গতকাল মারা গেছেন দুই মুসল্লি। এর মধ্যে একজন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগে এবং অপরজন ইজতেমা স্থলের উদ্দেশে আসার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির চাপায় মারা গেছেন।
বিশ্ব ইজতেমার মাসলেহাল জামাতের সদস্য মো. আদম আলী জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগে গতকাল মধ্য রাতে আজিজুল হক (৬০) নামের এক মুসল্লি মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি মাগুরার শালিখা থানার হবিশপুর গ্রামে। ফজরের নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে তাঁর জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা এক মুসল্লি গাড়িচাপায় মারা গেছেন। তাঁর নাম আবদুল মামুন (৩৩)। তিনি ঢাকার পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা কেরামত আলীর ছেলে।