হঠাৎ কেন চড়া ?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: গত সপ্তাহে কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন শামসুদ্দিন আহমেদ। শীতের সবজির আকর্ষণ মটরশুঁটি আর শিমের বিচি কেনাই ছিল উদ্দেশ্য। বিক্রেতা ১২০ টাকা কেজি চাওয়ায় ভেবেছিলেন পরের সপ্তাহে দাম কমে আসবে। তখনই পাল্লা ধরে কিনে ফেলবেন। তবে আজ রোববার সকালে বাজারে এসে দেখেন, সেই দাম তো কমেইনি, বরং গত সপ্তাহে কম দামে কেনা অন্যান্য সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আজ স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়, হঠাৎ সবজির দাম চড়ে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। আর বিক্রেতারা বলছেন, ঘন কুয়াশার কারণে সবজি পরিবহন কম হচ্ছে। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় তাঁদের বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার বিভিন্ন বাজারে সবজির দামে হেরফের হচ্ছে অনেক বেশি।
এদিকে শীতের সবজির দাম আরও কিছুদিন চড়া থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বগুড়া, যশোর ও রাজশাহী থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি রাজধানীসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়। এর বাইরে প্রতিটি অঞ্চলের আশপাশেও সবজির উৎপাদন হয়। শীত সামনে রেখে সাধারণত শীতের সবজিগুলোর উৎপাদন আগে থেকে শুরু হয়। শুরুতে দাম বেশি থাকলেও পরে ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। দেখা যায়, এই সময়টার দিকে দাম কমে যায়। তবে এবার বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন শুরু করতেই দেরি হয়েছে। তাই কম দামে সবজি কিনতে ক্রেতাদের অন্তত আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে দাম কমে আসতে পারে।
আজ সকালে রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব সবজির দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় বেড়েছে। সবজি বিক্রেতা আমিনুল হক বলেন, আকৃতি অনুসারে ফুলকপি প্রতিটি ২০ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ফুলকপি ১৫ টাকা করেও বিক্রি করেছেন। আজ বাঁধাকপি প্রতিটি ২৫ টাকা, পেঁয়াজপাতা কেজিপ্রতি ২০ টাকা, গোল আলু ৩০ টাকা কেজি, শসা ৩০, ৩৫ ও ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দামের হেরফের হয়েছে শাকের ক্ষেত্রে। গত সপ্তাহের তুলনায় আজ প্রায় দ্বিগুণ দামে লালশাক ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে।
কারওয়ান বাজারে আবদুস সাত্তারের দোকান থেকে সবজি কিনছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র আহনাফ আফজাল ও মো. সুলতান। আহনাফ বলেন, ‘গত কয়েক দিনে বাজারে সবজির দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে এখান থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে শিম কিনেছিলাম। আজ সেটাই কিনলাম ৬০ টাকা দরে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. সুলতান বলেন, ‘আমার এলাকায় দাম বেশি বলে কারওয়ান বাজার থেকে কিনি। এখানেও দাম বাড়ছে। এক কেজি বেগুন কিনলাম ৫০ টাকা দিয়ে। গত সপ্তাহে কিনেছি ৪০ টাকা কেজি দরে। তবে আমার এলাকায় আরও বেশি দাম। সেখানে ৬০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে।’
বিক্রেতা আবদুস সাত্তার জানান, আজ কেজিপ্রতি মটরশুঁটি ১১০ টাকা, শিমের বিচি ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা এবং টমেটো ৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
অপর বিক্রেতা মো. সজীব জানান, গত সপ্তাহে তিনি ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছিলেন। আজ দাম রাখছেন ৫০ টাকা। নরসিংদীর শিম বিক্রি করেছিলেন প্রতি কেজি ৩০ টাকা। আজ রাখছেন ৫০ টাকা। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা ওলকপি ৩০ টাকা, ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করা সরু বেগুন ৪০ টাকা, ১০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাল ও সাদা মুলা ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে কাঁচামরিচের দাম একই আছে। প্রতি কেজি ৮০ টাকা।
শীতের সবজির আরেক আকর্ষণ লাউও অনেক বেশি দামে আজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে লাউ বিক্রেতা আবুল হাশেম বলেন, ‘আজ ৯০ টাকা করে একেকটা লাউ বিক্রি করছি। পাইকারি দরে আমি কিনেছি ৭০ টাকা করে। ১০-১২ দিন আগেও এই লাউ ৫০ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (উপকরণ) কাজী মো. সাইফুল ইসলাম আজ বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায় ঘাটতি হচ্ছে। একদিকে শীতের কারণে মাঠে সবজির সঠিক পরিচর্যা করা যাচ্ছে না, মাঠেই অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে পরিবহনব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় দাম বাড়ার ঘটনা ঘটছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, এবার টানা দীর্ঘ সময় ধরে ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি চলছে। এটা বেশ অস্বাভাবিক বলা যেতে পারে। সবজি স্থানীয় পর্যায় থেকে সহজে পরিবহন করা যাচ্ছে না। তাই বাজারগুলোয় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে, অর্থাৎ যেখান থেকে সবজি সরবরাহ হচ্ছে, সেসব জেলায় দাম কম যাওয়ার কথা।