পরীক্ষা বাতিল না হলে আদালতে যাবেন পরীক্ষার্থীরা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রাষ্ট্রমালিকানাধীন আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আজ সকাল থেকেই পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা নয় দফা দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবি মানা না হলে পরীক্ষার্থী আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পরীক্ষার্থীরা জড়ো হন। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে তাঁরা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে বেলা দুইটা পর্যন্ত অবস্থান করেন তাঁরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন এই নিয়োগ পরীক্ষার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন।
পরীক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির মধ্যে আছে, ১২ জানুয়ারির পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) সদস্যসচিবের পদত্যাগ, প্রতিটি কেন্দ্রে আসনবিন্যাস নিশ্চিত করা, বিতর্কিত কেন্দ্র বাদ দেওয়া, বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া প্রভৃতি।
পরীক্ষার্থীরা আজ বাণিজ্য অনুষদের কয়েকজন দায়িত্বশীল শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। পরীক্ষার্থীদের একজন মশিউর রহমান বলেন, ‘একজন শিক্ষক স্বীকার করেছেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বড় পরীক্ষা সমন্বয় করার মতো অবস্থা নেই। পিএসসির মতো প্রতিষ্ঠান করে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া উচিত।’ তাহলে তাঁরা এ দায়িত্ব কেন নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে ওই শিক্ষক এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় পরীক্ষার্থীরা শাহবাগে মানববন্ধন করবেন। সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেবেন দাবি মেনে নেওয়ার জন্য। এ ছাড়া পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আগামীকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করবেন।
আন্দোলনরত পরীক্ষার্থী মশিউর বলেন, ‘এরপর আদালতে যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।’
মো. তানভীর নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সব কেন্দ্রেই কোনো না কোনো সমস্যা হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ওএমআর শিট নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বাইরে বের হয়ে আসেন। প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যায়। আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, যেসব কেন্দ্রে বেলা সাড়ে তিনটায় পরীক্ষা শুরু হয়, সেসব কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেরিতে শুরু হওয়া কেন্দ্রগুলোতে। এ ছাড়া কেন্দ্রে ডিভাইস নিয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে কেউ চেক করেনি।
বিতর্কিত কেন্দ্র নিয়ে খালেদ সাইফুল্লাহ নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমার কেন্দ্র ছিল তেজগাঁও কলেজে। সেখানে সিন্ডিকেটের লোক এসে কয়েকজনকে দেখিয়ে বললেন, বিশেষভাবে দেখতে। ঢাকা কলেজসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্র আছে, যেখানে সব সময়ই রাজনৈতিক প্রভাব আছে। এগুলো বাদ দেওয়া উচিত।’
পরীক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসনবিন্যাস থেকে শুরু করে সময়ের ব্যাপারে সব কেন্দ্রেই সমস্যা হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রশ্নও আগে ছড়িয়ে পড়ে। এক কেন্দ্রের পরীক্ষা বাতিল না করে সব কেন্দ্রের পরীক্ষা বাতিল করা উচিত।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন খান বলেন, ‘আমিও শুনেছি বিক্ষোভের কথা। তবে কথা বলার জন্য আমার কাছে কেউ আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, সামনের পরীক্ষাগুলোতে তাঁরা ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেবেন।
গত শুক্রবার আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্র ও বসার জায়গা না পেয়ে শাহ আলী মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধও করেছেন। ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০ জানুয়ারি। গত শুক্রবার সারা দেশে ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে।
গত বছর সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষাসহ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা না করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি সে আদেশ স্থগিত করেন। এই আদেশের ফলে ওই তিন ব্যাংকসহ আট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার (সাধারণ) ১ হাজার ৬৬৩টি শূন্য পদে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫২৫ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন।