নারী শ্রমিকদের সঞ্চয় বাড়লে স্বামীর নির্যাতনও বাড়ে
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিবাহিত অন্য নারীদের তুলনায় পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকেরা স্বামীর মাধ্যমে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। নারী শ্রমিকদের সঞ্চয় যত বাড়তে থাকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের মাত্রা তত বাড়তে থাকে। এই নারী শ্রমিকদের মধ্যে বিষণ্নতার হারও বাড়ে, যা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক ভিত্তি জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা বলছেন, পোশাকশিল্পে কর্মরত নারীরা অর্থ উপার্জন করছেন। অনেক ক্ষেত্রে এই নারীরাই পরিবার চালাচ্ছেন। স্বামীর থেকে বেশি সঞ্চয় করছেন। স্বামী এটা মেনে নিতে পারছেন না। ফলে হাতে টাকা থাকার পরও এই নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকদের ওপর স্বামীর নির্যাতন এবং কর্মক্ষেত্রে অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতা কমানোর জন্য ‘মেজারিং দ্য ইফেক্ট অব হাররেসপেক্ট: এন ইন্টারভেনশন এড্রেসিং ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট ফিমেইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইন ফোর ফ্যাক্টরিস অব বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রকল্প কার্যকর হবে কি না, তা মূল্যায়ন করার জন্যই রাজধানীর আটটি পোশাকশিল্প কারখানার ৮০০ নারী শ্রমিকের ওপর এ জরিপ করা হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
আজ সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে এ জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সংস্থা ইউকে এইড এবং সাউথ আফ্রিকান মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের অর্থায়নে এটি পরিচালিত হয়।
জরিপের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আটটি কারখানার ৪০ শতাংশ নারী শ্রমিকের মধ্যে বিষণ্নতার উপসর্গ বিদ্যমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১৫’ শীর্ষক জরিপ চালানোর গত ১২ মাসে স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন ২৭ শতাংশ নারী। তবে আইসিডিডিআরবির নতুন জরিপের ফল অনুযায়ী নারী পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে (সাক্ষাৎকার নেওয়ার গত ১২ মাসে) স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের এই হার ৫৩ শতাংশ।
জরিপের প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, একজন নারী শ্রমিকের সঞ্চয় ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের ঝুঁকি শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে ৩ গুণ, আর যৌন ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে ২ গুণ বাড়ে।
জরিপের তথ্য উপস্থাপনের সময় আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রুচিরা তাবাসসুম নভেদ বলেন, নারী শ্রমিকেরা স্বামীর নির্যাতনের শিকার হলে তা কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ বাড়ায়। কর্মক্ষেত্রে অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতার জন্ম দেয় এবং সাধারণ স্বাস্থ্য, আত্মসম্মান ও জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির অবনতি ঘটায় যা বিষণ্নতা তৈরি করে।
আজকের অনুষ্ঠানে জরিপ ও নারী নির্যাতনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক জন ডেভিড ক্লেমেন্স, সহকারী বিজ্ঞানী কাউসার পারভীন, বিজনেস সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির ব্যবস্থাপক মারাট ওয়াইইউ, পারিবারিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের জাতীয় সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক, এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের দেশীয় ব্যবস্থাপক জামিল আনসার, কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক হুমায়রা আজিজ এবং লিনডেক্সের সাউথ এশিয়া সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার কাজী মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।