শিশুটিকে হত্যার পর মুক্তিপণ আদায়
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পাঁচ বছরের শিশু রিফাতকে অপহরণের দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার দুদিন পর শিশুটির পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চান অপহরণকারীরা। এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায়ও করে। বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে অপহরণের ১০ দিন পর শিশু রিফাতের বস্তাবন্দী লাশ বাথরুমের ফলস ছাদ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায়। আজ সোমবার সকালে উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের খড়িয়ালা গ্রাম থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
অপহরণকারীরা জানান, তাঁদের এক সঙ্গীর বিয়ের টাকা জোগাড় করতে এবং টাকার ভাগ পেতে শিশু রিফাতকে অপহরণ করা হয়। তবে অপহরণের পর রিফাত কান্নাকাটি করায় এবং তাদের চিনে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়।
নিহত রিফাত উপজেলার খড়িয়ালা গ্রামের বাহার মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
অপহরণে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন বরগুনার পাথরঘাটার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে সোহাগ মিয়া (২৪), ঝালকাঠির কাঠালিয়ার আনছার আলীর ছেলে সোলায়মান মিয়া (২২) এবং নোয়াখালীর নাবালক মিয়ার ছেলে মো. ইলিয়াস (৫৫)। মূল হোতা মিজান মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। মিজানের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা মিজানের বিয়ের টাকা জোগাড় এবং সেই টাকার ভাগ পাওয়ার লোভে রিফাতকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত রিফাতের বাবা বাহার মিয়া ও অপহরণকারী চারজন খড়িয়ালা গ্রামে রাইডার নামে একটি ব্যাগ তৈরি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। অপহরণকারীরা তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মুমিন মিয়ার খড়িয়ালায় গ্রামের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
স্থানীয় লোকজন, নিহত রিফাতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে খড়িয়ালা এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় রিফাত। বাহার মিয়া ছেলের নিখোঁজের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। পরে ৭ জানুয়ারি তিনি আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজের দুই দিন পর অপহরণকারীরা বাহার মিয়ার পাশের বাড়ির এক কৃষককে ফোন করে জানান, রিফাত তাঁদের কাছে আছে। রিফাতের বাবাকে যেন তা জানানো হয়। ওই কৃষক রিফাতের বাবাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি অপহরণকারীদের ওই নম্বরে ফোন করেন। ওই সময় তাঁর কাছে ছেলের মুক্তিপণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
রিফাতের বাবা পুলিশের পরামর্শে তিনটি বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা পাঠান। পরে পুলিশ বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে খোঁজ নেওয়া শুরু করে। গতকাল রোববার রাতে ভাড়া বাসা থেকে সোহাগ, সোলায়মান ও ইলিয়াসকে আটক করে পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা শিশুটিকে অপহরণ এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুসারে আজ একতলা ভবনের ভাড়া বাসার বাথরুমের ফলস ছাদ থেকে রিফাতের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির অপহরণকারীদের স্বীকারোক্তির তথ্য দিয়ে বলেন, অপহরণের দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে শিশুটিকে কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তাঁরা। অপহরণের পর শিশুটিকে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসার পর সে কান্নাকাটি শুরু করে। সে অপহরণকারীদের চিনে ফেলে এবং বাসায় তা বলে দেবে বলে জানায়। ওই ভবনের পাশের কক্ষে অন্য পরিবার থাকে। তাঁরা শিশুটির কান্নার আওয়াজ পেলে ধরা পড়ে যাবেন, এসব ভয় থেকে শিশুটিকে হত্যা করেন।
অপহরণকারীরা আরও জানান, মূল হোতা মিজান অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেন। মিজান জানান, তিনি বিয়ে করবেন। এ জন্য টাকা লাগবে। মুক্তিপণ থেকে যে টাকা পাওয়া যাবে, তার ভাগ তাঁদেরও দেবেন বলে লোভ দেখান।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার বলেন, মিজানকে আটক করতে পিরোজপুর সদর উপজেলায় পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানান, মিজান অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির লোক।
রিফাত অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।