৪ ঘণ্টা পর ২৫০ পর্যটক উদ্ধার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফে ফেরার সময় বঙ্গোপসাগরে ‘এলসিটি কাজল’ নামের একটি জাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। ৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে ২৫০ পর্যটকসহ জাহাজটি উদ্ধার হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকে পর্যটক উদ্ধার হওয়ার আগ মুহূর্ত (রাত সাড়ে আটটা) পর্যন্ত জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার জলসীমায় ভাসছিল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ইউএনও কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেন্ট মার্টিন জেটি থেকে পর্যটক নিয়ে ফিরছিল জাহাজটি। বিকেল সাড়ে চারটায় নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার একটু আগে মিয়ানমারের জলসীমানার কাছাকাছি নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকার ইঞ্জিন বিকল হয়। জাহাজটির দুটি ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় তা চালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় নাবিকেরা। কিন্তু জাহাজের জেনারেটরটি চালু ছিল। জাহাজটি ছিল মিয়ানমার জলসীমানায় দিয়ে আসছিল। তাই পর্যটকেদের আতঙ্কিত না হতে কোস্টগার্ড সদস্যরা টহলে ছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারী কমিশনার ভূমি প্রণয় চাকমার নেতৃত্বে অপর ‘এলসিটি কুতুবদিয়া’ পর্যটকদের উদ্ধারে পাঠানো হয়। টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে গিয়ে ওই জাহাজে থাকা ২৫০ পর্যটককে রাত সাড়ে আটটার দিকে উদ্ধার করা হয়। পরে বিকল জাহাজটিকে রশি দিয়ে বেঁধে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে পর্যটকসহ দমদমিয়া ঘাটে এসে পৌঁছায়। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বিজিবি ও টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক পর্যটকদের পাশে ছিলেন। ফলে বড় অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছেন পর্যটকেরা।
সহকারী কমিশনার ভূমি প্রণয় চাকমা বলেন, রাতে ফেরার সময় ও আটকা পড়া অবস্থায় তীব্র শীত ও কুয়াশা থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন পর্যটকেরা। নিরাপদে ফিরতে পেরে সবাই স্বস্তিতে আছেন।
সিলেটের চালুজিগার ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপক সালেহ আহমদ মুঠোফোনে জাহাজ থেকে বলেন, ১২ জন আত্মীয়-স্বজনসহ সাগরের মাঝখানে ৪ ঘণ্টা ভাসমান ছিলাম। অনেক পরিবারের শিশু, নারী সঙ্গে ছিলেন। জাহাজটি ভাসতে ভাসতে মিয়ানমারের ভেতরে চলে যায়। এতে পর্যটকেরা আতঙ্কিত ছিল। জাহাজটিতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বেড়াতে এসে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হব সেটা কোনো দিন ভাবিনি।’
এলসিটি কাজল জাহাজের টেকনাফের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘নাফ নদীর মোহনা থেকে একটু দূরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় হঠাৎ করে জাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এতে করে ৪ ঘণ্টা ভাসমান ছিল জাহাজটি। পরে রাত সাড়ে আটটার পর টেকনাফ থেকে যাওয়া এলসিটি কুতুবদিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যটকদের উদ্ধার করে এবং বিকল জাহাজটিকে রশি দিয়ে বেঁধে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
উদ্ধারকারী জাহাজ এলসিটি কুতুবদিয়ার ব্যবস্থাপক মো. আজিজ বলেন, শুরুতেই জাহাজটি আমাদের সহযোগিতা নিলে এ ধরনের ঘটনা হতো না। রাত হয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা আতঙ্কিত ছিল।
এমভি পারিজাত জাহাজের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটক পরিবহনে এ ধরনের ত্রুটিযুক্ত জাহাজ চলাচল করলে পর্যটন শিল্পের জন্য ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এ শিল্প বিকশিত করতে হলে এখানে মানসম্মত জাহাজ যুক্ত করতে হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, এ ঘটনায় জাহাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।