নিজের শিক্ষককে গলাধাক্কা দিলেন সাংসদ সাইমুম
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কক্সবাজারের রামুতে আওয়ামী লীগের সাংসদ সাইমুম সরওয়ারের হাতে স্থানীয় এক প্রবীণ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। সুনীল কুমার শর্মা নামের ওই ব্যক্তি আবার সাংসদের শিক্ষকও। গত রোববার দুপুরে উপজেলার জোয়ারিয়ানালা এলাকায় জনসমক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাংসদ সাইমুম সরওয়ারের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তবে সাংসদের বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার বলেন, সাংসদ সাইমুমের হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা এবং প্রবীণ শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক সভায় ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় সাংসদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মণ্ডল বলেন, সাংসদের হাতে একজন প্রবীণ শিক্ষক প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হবেন, এটা কেউই আশা করেনি।
সুনীল কুমার শর্মা রামুর চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা। ২০১৪ সালে তিনি
স্থানীয় উত্তর কাহাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি রামুর রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এটি বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ শহিদুজ্জামানের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত।
সুনীল কুমার শর্মা বলেন, গত রোববার বেলা দেড়টার দিকে তিনি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে জোয়ারিয়ানালা বাজারে দেখা হয় স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ারের সঙ্গে। এ সময় সাংসদ বাজারের দক্ষিণ পাশে বিকেএসপির মাঠের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন শেষে মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে সাংসদ সাইমুম তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন। বলেন, ‘তোর ছেলে সুজন আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। তাকে সাবধান করে দিস। নইলে তাকে গায়েব করে ফেলব।’
তখন শিক্ষক সুনীল কুমার ‘তুই-তোকারি’ করে কথা বলার কারণ জানতে চান সাংসদের কাছে। এটাও স্মরণ করিয়ে দেন যে তিনি একসময় সাংসদের শিক্ষক ছিলেন। এ কথা বলার পর সুনীল কুমারের কাছে চলে আসেন সাংসদ। তারপর গলায় হাত দিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারেন। এরপর পাঞ্জাবি টেনে ধরে বলেন, ‘তোর ছেলেকে সাবধান করবি। নইলে খবর আছে।’
এ ঘটনার সময় সেখানে অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে সাংসদ সাইমুমের হাত থেকে শিক্ষক সুনীলকে রক্ষায় কেউই এগিয়ে আসেননি।
সুনীল কুমার শর্মা বলেন, প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে এলাকার সবাই তাঁকে সম্মান করেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। অথচ ছেলের জন্য প্রকাশ্যে তাঁকে লাঞ্ছিত করলেন সাংসদ সাইমুম। তাঁর ছেলে সুজন শর্মা ঢাকায় রামু সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সমিতির কর্তৃত্ব নিয়ে সুজনের সঙ্গে সাংসদের বিরোধ আছে।
সমিতি সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রামু সমিতির বার্ষিক উৎসব আগামী শুক্রবার। এই উৎসবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদসহ অনেকে উপস্থিত থাকবেন। এ উৎসব নিয়ে গত শুক্রবার মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনির মাঠে সাংসদ সাইমুমের সঙ্গে রামু সমিতির নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে ফোরকান আহমদকে অতিথি করার ব্যাপারে আপত্তি তোলেন সাংসদ সাইমুম। তখন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন শর্মা বলেন, ফোরকান আহমদ রামু সমিতির উপদেষ্টা। তিনি অতিথি হিসেবে থাকতেই পারেন। এ সময় সাংসদ সাইমুম উত্তেজিত হয়ে বলেন, রামু সমিতিতে সুজন শর্মা থাকলে উৎসব হবে না। এরপরও উৎসবের আয়োজন করলে তিনি তা প্রতিরোধ করবেন। এই বলে তিনি বৈঠক ছেড়ে চলে যান।
এ বিষয়ে সুজন শর্মা বলেন, ‘মূলত সাংসদ সাইমুম চাইছেন রামু সমিতি তাঁর ইশারায় চলুক। কিন্তু আমরা কোনো দিন তা হতে দেব না। কারণ, রামু সমিতি আমরাই তৈরি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অথচ এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সাংসদ আমার বৃদ্ধ বাবাকে লাঞ্ছিত করলেন। আবার তিনি (বাবা) সাংসদ সাইমুমের শিক্ষকও।’
সুনীল কুমার শর্মা বলেন, ‘একসময় আমি রামু শহরের মণ্ডলপাড়ার বাড়িতে গিয়ে সাংসদকে পড়িয়েছি। এখন তিনি একজন আইনপ্রণেতা। এমন একজন মানুষও নিজের শিক্ষকের গায়ে হাত তুললেন। লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।’