ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজে দুই শ পার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে আগেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটা কী তাই একটু হালকা চালেই নিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ? দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানের শতরানের জুটি এ প্রশ্নের জবাব নয়। ৫০ ওভারে সংগ্রহটা যে ২১৬ রানের বেশি হলো না—তাতে কিন্তু অনেকেই এমনটা ভাবতে পারেন
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ খেলা হয়েছে কঠিন উইকেটে। পিচ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উইকেটে শুরুর দিকে অপ্রত্যাশিত বাউন্স থাকতে পারে, কিংবা হালকা বাঁক খেতে পারে বল। তবে টিকে থাকলে সময় গড়ানোর সঙ্গে উইকেটও সহজ হয়ে আসবে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এই উইকেট এনামুল-নাসির-সাব্বিরদের কাছে হাতের তালুর মতো চেনা। অথচ তাঁরাই কিনা কেউ-ই উইকেটটা ঠিকমতো পড়তে পারলেন না!
আগের দুই ম্যাচে প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি দীর্ঘদিন পর দলে জায়গা পাওয়া এনামুল হক। আজকের চাপহীন ম্যাচকে তিনি বড় স্কোর গড়ার সুযোগ হিসেবে নিতে পারতেন। কিন্তু সামনের পায়ে খেলার ক্ষেত্রে এনামুলের বরাবরের দুর্বলতা প্রমাণ হলো আজও। তৃতীয় ওভারে কাইল জার্ভিসের প্রথম বলেই এলবিডব্লু। ৭ বলে মাত্র ১ রান করে দলে নিজের জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন তিনি।
বাংলাদেশের এই ইনিংসে যা কিছু সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে সেটা দ্বিতীয় উইকেট। ১৫১ বলে ১০৬ রানের জুটি গড়ে দলকে শক্ত ভিত পাইয়ে দেওয়ার পথেই ছিলেন তামিম-সাকিব। কিন্তু তাঁদের ব্যাটিংয়ের সুর কেটে গেল একেবারে হঠাৎ করেই। ২৮তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হলেন সাকিব। ৮০ বলে তাঁর ৫১ রানের ইনিংসটা কিন্তু আরও বড় হতে পারত। যেমন হতে পারত তামিমের ইনিংসও।
আগের ম্যাচে ফিফটি তুলে নেওয়া মুশফিক তৃতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ১৪৭ রানে মুশফিককে তুলে নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেমার। এরপরই পথ হারায় বাংলাদেশ। ২৩ রান তুলতেই পড়েছে আরও ৫ উইকেট!
মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসির—কেউ নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ক্রেমারের বলে এলবিডব্লিউ হন মাহমুদউল্লাহ (২)। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে বুক চিতিয়ে লড়ার মানসিকতা হারানোর প্রমাণটা আবারও রেখেছেন নাসির। তাঁকে ও সাব্বিরকে ফেরত পাঠান জার্ভিস। সাব্বির ও নাসির উইকেটে আরও কিছুক্ষণ থাকলে সাদামাটা নয় লড়াই করার স্কোরই গড়তে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু এ দুই তরুণ পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে সাবধানে ব্যাটিং করেননি। উল্টো বাংলাদেশের দলীয় ১৭০ রানে অষ্টম মাশরাফিকে তুলে নিয়ে ওয়ানডেতে শততম উইকেট শিকারের মাইফলক গড়েন ক্রেমার। ৪ উইকেট নেন তিনি।
পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে আরও একজনের ব্যাটিং করার কথা ছিল। তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ইনিংসের রাশ তাঁর হাতেই ছিল। ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইফলক ছোয়ার সঙ্গে তামিম এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিও গড়েছেন এ ম্যাচে। কিন্তু তাঁর আউট দলের বিপদকে আরও ঘনীভূত করেছে। ৩৯তম ওভারে তামিম যখন আউট হন বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১৬৩। তাঁর আউটের পরপরই দুই শ ছোঁয়ার আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা চেপে বসেছিল বাংলাদেশ শিবিরে।
কিন্তু এ শঙ্কা থেকে উদ্ধার করলেন যিনি তিনি ‘কাটার’ নয় ‘ব্যাটার’ মোস্তাফিজ। নবম উইকেটে সানজামুলের সঙ্গে তাঁর ২৬ রান এবং দশম উইকেটে রুবেল হোসেনের সঙ্গে ২০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লড়াকু স্কোর পাইয়ে দেন মোস্তাফিজ। ২ বাউন্ডারিতে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৮ রানে!
স্কোরকার্ড:
টস: বাংলাদেশ | ||||
বাংলাদেশ | রান | বল | ৪ | ৬ |
তামিম স্টা টেলর ব ক্রেমার | ৭৬ | ১০৫ | ৬ | ০ |
এনামুল এলবিডব্লু ব জারভিস | ১ | ৭ | ০ | ০ |
সাকিব স্টা টেলর ব রাজা | ৫১ | ৮০ | ৬ | ০ |
মুশফিক ক মুজারাবানি ব ক্রেমার | ১৮ | ২৫ | ০ | ১ |
মাহমুদউল্লাহ এলবিডব্লু ব ক্রেমার | ২ | ৭ | ০ | ০ |
সাব্বির ক আরভিন ব জারভিস | ৬ | ১১ | ০ | ০ |
নাসির ক টেলর ব জারভিস | ২ | ৮ | ০ | ০ |
মাশরাফি ক টেলর ব ক্রেমার | ০ | ৮ | ০ | ০ |
সানজামুল ক মুজারাবানি ব চাতারা | ১৯ | ২৪ | ৩ | ০ |
মোস্তাফিজ অপরাজিত | ১৮ | ২২ | ২ | ০ |
রুবেল অপরাজিত | ৮ | ৪ | ০ | ১ |
অতিরিক্ত (লেবা ২, নো ১, ও ১২) | ১৫ | |||
মোট (৫০ ওভারে, ৯ উইকেটে) | ২১৬ | |||
উইকেট পতন: ১-৬ (এনামুল, ২.১ ওভার), ২-১১২ (সাকিব, ২৭.১), ৩-১৪৭ (মুশফিক, ৩৪.২), ৪-১৫৬ (মাহমুদউল্লাহ, ৩৬.১), ৫-১৬৩ (তামিম, ৩৮.১), ৬-১৬৭ (সাব্বির, ৩৯.৩), ৭-১৬৮ (নাসির, ৪১.২), ৮-১৭০ (মাশরাফি, ৪২.২), ৯-১৯৬ (সানজামুল, ৪৮.১)। | ||||
বোলিং: জারভিস ৯-০-৪২-৩, চাতারা ৭-০-৩৩-১ (ও ৫, নো ১), মুজারাবানি ৭-০-৩৬-০ (ও ২), রাজা ১০-১-৩৯-১ (ও ১), ক্রেমার ১০-০-৩২-৪, ওয়ালার ৭-০-৩২-০। |