বিদেশিরা সাদা মনে বিএনপিকে নির্বাচন যেতে বলে
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘সরকার বলছে-আমরা চাই সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে আসবে। খুব ভালো কথা। কিন্তু তারা কাজে কর্মে কী করে, মাঠ পর্যায়ে কী করছে। হাত-পা সব কিছু বেঁধে বিএনপিকে বলছে এখন আপনারা সাঁতার কাটেন।’
আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন আয়োজিত ‘খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে নাগরিক প্রতিবাদ সভা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ করে মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের সাঁতার কাটতে বলছে। অথচ আমাদের নেত্রী জেলখানায়। আমাদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। ১১ লাখ নেতা-কর্মী বিভিন্ন অভিযোগের আসামি। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলখানায়। আমাদের যারা সত্যিকারের কর্মী, যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন, তাদের বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয় না, তাদের গ্রেপ্তার করে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমাদের সভা সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের ৮০/৯০ ভাগ এলাকায় কোনো ঘরোয়া কর্মসূচি করতে দেওয়া হয় না। কোনো একটা স্কুল রুমে বসে যে সভা করবে, তারও কোনো উপায় নাই। আবার আপনারা বলছেন নির্বাচনে আসতে।
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বিদেশি কূটনীতিকেরা সাদা মনে বলেন বিএনপির নির্বাচন করা উচিত। দায়িত্বশীল সংবাদপত্রগুলোও মনে করে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। তার সঙ্গে সঙ্গে তারা এ কথা বলে না যে নির্বাচনে অংশ নিতে ন্যূনতম যে অধিকার থাকা উচিত, সে অধিকার থেকে বিরোধী দলগুলো বঞ্চিত। এই কথাগুলো তারা বলে না। আমাদের অনেক বিজ্ঞ মানুষ কানে কানে বলেন এইবার কিন্তু নির্বাচন বর্জন করবেন না। কিন্তু নির্বাচনটা কীভাবে করবো- একটু বুঝিয়ে বলেন না। আমরা তো নির্বাচনে যেতে চাই। বিএনপি তো একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা তো বুলেটে বিশ্বাস করি না, ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করি না।
সরকার সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তারপরও আমরা টিকে আছি একটা মাত্র কারণে সেটা হলো মাঠ পর্যায়ে, তৃণমূল পর্যায়ে, কৃষক, শ্রমিক, দিন মজুর, ছাত্র, বেকার সবার সমর্থনে ওপর নির্ভর করে আছি। এটাই তো আমাদের শক্তি। এই শক্তিকে যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া উচিত, সেই সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত।
সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির শীর্ষ নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের আমলে বাংলাদেশের যদি সবচাইতে বড় কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, সেটা হলো বিচার বিভাগের উচ্চতম আদালত বলেন, নিম্ন আদালত বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে যেটা বোঝায়, এই স্বাধীনতা নানা কলা-কৌশলের মাধ্যমে সরকার ছিনিয়ে নিয়েছে।
মওদুদু আহমদ বলেন, ‘এখন কোনো আদালতে বিচারপতির পক্ষে ভয় ভীতি শঙ্কা মুক্ত বিচার করা সম্ভব নয়। আমি যদি আজকে বিচারপতি থাকতাম, আমি একশ বার চিন্তা করতাম, যে আমি সরকারের বিপক্ষে যদি কোনো রায় দিই। বেগম জিয়ার মামলা বা আমাদের মামলার ব্যাপারে তাহলে আমার তো অসুবিধা হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। বিচার বিভাগে খাতা কলমে স্বাধীনতা আছে কিন্তু বাস্তবে তা নেই। মুক্তমনে বিচার করার যে শক্তি থাকার কথা, সেটা এখন আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’
মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রেমী। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার পছন্দ করে না। কোনো না কোনো এক সময় গিয়ে তারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে আন্দোলন করে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আমির হোসেন বাদশাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদ মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত সেলিম প্রমুখ।