কাউকে জেলে দেবেন না এরশাদ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে কাউকে জেলে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আজ শনিবার দুপুরে বগুড়ার পর্যটন মোটেলে জাতীয় পার্টির রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এ কথা জানান তিনি।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, ‘সব জায়গার একই অবস্থা। গ্রামের মানুষেরও এখন শান্তি নেই। মানুষ শান্তি চায়। খুন, ধর্ষণ, গুম আর চায় না মানুষ। এই কারণে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনা দরকার। আমরা ক্ষমতায় এলে সব দলই নিরাপদ। আমরা কাউকে জেলে দেব না।’
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশের সব খাতে এখন দুর্নীতিতে ভরা। অনেকে দুর্নীতি করে বিদেশে বাড়ি বানিয়ে রেখেছেন। সেকেন্ড হোম করেছেন। তার মানে কোনো কিছু হলেই বিদেশে পালিয়ে যাবেন। কিন্তু আমি দেশের সন্তান, দেশেই মরতে চাই।’
দেশের উন্নয়নের মহাসড়ক এখন খাল আর খনাখন্দে ভরা বলে মন্তব্য করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, ‘এখন নাকি দিনবদলের সরকার ক্ষমতায়। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে দেশ। কিন্তু উন্নয়নের এই মহাসড়ক এখন খাল আর খন্দ ভরা। আগে রংপুর থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগতো ছয় ঘণ্টা। এখন লাগে ১২ ঘণ্টা। সব জায়গায় একই অবস্থা।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মেয়েরা এখন ভয়ে স্কুলে যেতে পারে না। প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখি মেয়েদের নির্যাতনের চিত্র। মেয়েরা স্কুলে গেলে উত্ত্যক্তের শিকার হয়। এই কারণে বাপ-মা স্কুলে পাঠায় না। ফলে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে না দিলে মেয়েরা নিরাপদ নয়। এমনকি মা-বাবাও নিরাপদ নয়। আতঙ্কে থাকেন, এটা আমাদের সময়ে ছিল না।’
দেশে শিক্ষিত বেকারদের প্রসঙ্গে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে এখন বেকারের অভাব নেই। অনেক ছেলে বেকার। পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি নিতে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ লাগে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। আমরা কোন সমাজে বাস করি। কোন দেশে বাস করি। আমার সময়ে এমন ঘটনা ঘটলে আমি আত্মহত্যা করতাম।’
দেশে চাকরি না থাকার কারণে ছেলে-মেয়েরা এখন মাদকে জড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চায়ের দোকানেও এখন ইয়াবা পাওয়া যায়। বেকার ছেলে-মেয়েরা হতাশা থেকে ইয়াবা খায়। ইয়াবায় ভরে গেছে দেশ। এখনই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ধস নিয়ে তো অনেক কথা হয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত সেটা আমরা জানি। শেয়ারবাজার থেকে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। এর সঙ্গে জড়িতদের কোনো বিচার হয়নি।’
এই সরকারের আমলে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের লোকজনই টাকা চুরির সঙ্গে বেশি জড়িত। মানুষের রক্ত-ঘামে অর্জিত টাকা। কিন্তু কোনো ব্যাংকে এখন টাকা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও কেউ সেই তদন্তের বিষয়ে কিছুই জানি না।’
সভায় দলটির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য করেন জাপা সাংসদ ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, সাংসদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা কমিটির নেত-র্কমীরা। সভাটি সঞ্চালনা করেন দলটির যুগ্মমহাসচিব ও সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর।