বিএনপির চিন্তা-কল্পনাতেও যা ছিল না
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হবে, এটা চিন্তা-কল্পনাতেও ছিল না দলটির। তাঁর আইনজীবীদের ধারণা ছিল, তিনি সহজে জামিন পাবেন। দলটির নেতারাও বলছেন, আইনজীবীরা এমনটাই তাঁদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আইনজীবীরা বলছেন ভিন্ন কথা।
চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বিএনপি পরিচালনাকারী নেতাদের বলছেন, তাঁদের চেয়ে (আইনজীবী) খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি এখন ‘সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার’ ওপরও অনেকখানি নির্ভর করছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনকে কারারুদ্ধ রাখতে সরকার এতটা কঠোর অবস্থানে থাকবে এমনটা ভাবেননি দলটির রাজনৈতিক নেতা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা। তা ছাড়া এখন কেবল অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিনের ওপর খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে না। বিভিন্ন সময় জামিন না নেওয়া অন্তত পাঁচ মামলার বিষয়টি সামনে এসেছে। এরপর রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল মামলা। সব মিলে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ‘সরকারের হাতে’ চলে গেছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তবে দলটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বহাল থাকবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ জজ আদালত-৫ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ের পর থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের অনুলিপি হাতে পায় বিএনপি। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ২২ ফেব্রুয়ারি এর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি তলবের আদেশ দেন। ১২ মার্চ আদালত খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। পরদিন ১৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে পৃথক দুটি আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জামিন স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিলটি কাল আপিল বিভাগে শুনানির ধার্য রয়েছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হবে, এটা প্রত্যাশা ছিল না। পাঁচ বছরের মামলায় আশা করা হয়েছিল, জামিন আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে হাইকোর্ট জামিন দিয়ে দেবেন। জামিনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ কখনো হস্তক্ষেপ করেন না, ‘নো অর্ডার’ দিয়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু এখানে আপিল বিভাগ সরকারকে বললেন যে ‘তোমরা লিভ পিটিশন দায়ের করো।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে যদি বিচারব্যবস্থা থাকে, তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হবে। কুমিল্লার অপেক্ষমাণ (পেনডিং) মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো। স্বাভাবিকভাবে অরফানেজ মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়া হলেও কুমিল্লার মামলায় জামিন না হয়, তাহলে তিনি বের হতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। আইনের মারপ্যাঁচে সরকার ইচ্ছা করলে খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন জেলে রাখতে পারবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়া জামিন পেতে এত বড় ঝামেলা হবে, সেটা তাঁদের ধারণায় ছিল না। বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই নথি ১৫ দিনের দিন হাইকোর্টে পৌঁছায়। আবার একই দিন কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হাজিরা পরোয়ানার (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট-পিডব্লিউ) নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে খালেদা জিয়াকে এই মামলার জন্য ২৮ মার্চ কুমিল্লার আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হতে পারে, আমরা এটা চিন্তাও করতে পারিনি।’ কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার হাজিরা পরোয়ানা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, এখন বোঝা যাচ্ছে সরকারের অনেক দিন আগের পরিকল্পনা, খালেদা জিয়াকে জেলে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আইনগতভাবে খুব বেশি দিন লাগবে না খালেদা জিয়ার বেরিয়ে আসতে। তবে বেআইনি তো অনেক কিছুই হচ্ছে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখলেও সাম্প্রতিক ধরপাকড়ের পেছনে খালেদার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তা ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে হঠাৎ গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেপ্তার তৎপরতাও দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। সবশেষ ৬ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে শাহবাগ থানা-পুলিশ তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিলন গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়ার ঘটনাও ভাবিয়ে তুলেছে দলটিকে। এর মাধ্যমে দলটিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা কি না সেটিও ভাবছে বিএনপি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন পাবেন, এমন আশা ছিল। এখন তাঁর জামিন পাওয়ার বিষয়টি সরকারের হাতে, আইনজীবীদের হাতে নেই।