চালক বেপরোয়া, সড়কে ঝরছে প্রাণ

আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজ বিডি,
ঢাকা :ভোলা : চালকদেও বেপরোয়া গতি আর ক্লান্তিহীন পরিবহন পরিচালনায় প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। মরছে মানুষ, বরণ করছে পঙ্গুত্ব। কিন্তু নেই কোনো কার্যকর প্রতিকার ব্যবস্থা। ফলে সড়কে পা ফেলার আগেই সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাণ কিংবা অঙ্গহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দুর্ঘটনা রোধে মিছিল-মিটিং এমনকি সভা-সেমিনার করেও প্রতিকাওে নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ। দুর্ঘটনা রোধে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
নেশা করে গাড়ি পরিচালনা, মানসিক বৈপরীত্য ও নৈতিক স্খলন আর খামখেয়ালিপনায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সড়কের অঙ্গহানি ও প্রাণ হারানোর ঘটনা। সাধারণের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের সুদৃষ্টির অভাব সেই সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আর আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে। চালকদের এমন বৈপরীত্য ঠেকাতে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
অপরাধ বিশেজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয় না। আবার মামলা হলেও নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘসময় লাগে। ফলে ভুক্তভোগীরা হতাশ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিতের ক্ষেত্রে কোনো শঙ্কাবোধও করেন না। এ কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এসব অপরাধ।
গত এক মাসে (এপ্রিল ২০১৮) মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শরীর থেকে অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীব, হৃদয়, রোজিনা ও রাসেলের। একেকটি দুর্ঘটনায় যেন একেকটি স্বপ্নের মৃত্যু হয়। বয়সে সবাই ছিলেন তরুণ। তাদের ওপর নির্ভর করেছিল অসহায় ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। কিন্তু চালকদেও বৈপরীত্যে স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হলো।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে ঘটনাস্থলে ডান হাত হারান মা-বাবা হারা রাজীব হোসেন (২১)। টানা ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেন তিনি। অবশেষে ১৭ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান। তার মৃত্যুর একদিন পর অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাত্রীবাহী একটি বাসকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয় দ্রুতগতির একটি ট্রাক। এতে পরিবহন শ্রমিক খালিদ হাসান হৃদয়ের (২২) ডান হাত ঘটনাস্থলেই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হৃদয় এখনও চিকিৎসাধীন। এরও দুদিন পর অর্থাৎ ২০ এপ্রিল রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় বিআরটিসির বাসচাপায় গৃহপরিচারিকা রোজিনা আক্তারের (১৮) শরীর থেকে ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টানা আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র ভরসার স্থান রোজিনাও চলে যান না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুর দিনই অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় হানিফ ফ্লাইওভারের ঢালে গ্রিনলাইন পরিবহনের চাপায় শরীর থেকে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয় রাসেল সরকারের। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য বলছে, দেশে ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো এবং ৩৭ শতাংশ চালকের বেপরোয়া মনোভাব। অর্থাৎ সড়কে দুর্ঘটনার জন্য ৯০ শতাংশই দায়ী চালক নিজেই। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, চালকদের প্রশিক্ষিত না করে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া, তাদের দক্ষতা যাচাই না করা এবং সেই সঙ্গে সড়ক আইনের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবহিত না করেই লাইসেন্স দেওয়ায় মূলত এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ