কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি বাসে ছাত্রলীগের হামলা

জেলা প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি,
কুমিল্লা : কোট সংস্কারের আন্দোলনে বাঁধা দেওয়ার পর শিক্ষার্থী বহনকারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি বাসে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় নগরের পুলিশ লাইনস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে ১৩ মে (রবিবার) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুমিল্লা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তখন প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এ ঘটনার জন্য কুমিল্লা বশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পরস্পরকে দায়ী করেছেন।

শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ মে (রবিবার) বিকেল পাঁচটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস নগরের ফৌজদারি মোড়ে যাচ্ছিল। বাসটি বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা সরকারি কলেজ-সংলগ্ন পুলিশ লাইনস এলাকা পার হচ্ছিল। ওই সময়ে কুমিল্লা সরকারি কলেজ শাখা ও মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বাসটি থামান। তখন শিক্ষার্থীদের বাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা দিয়ে পুরো বাসের দরজা-জানালা ও সামনের কাচ পুরোপুরি ভেঙে ফেলেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তখন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা সরকারি কলেজের ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় বিক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলেজে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একই সময়ে পুলিশ লাইনস এলাকার কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।

শিক্ষার্থীদের বাসে ভাঙচুরের ঘটনা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে নগরের ঝাউতলা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বাসে হামলা চালানো হয়। তখন ক্যাম্পাস থেকে শহরগামী অন্যান্য রুটের আরও চারটি বাস সড়কের মধ্যে থেমে যায়। তখন নগরের বিভিন্ন সড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাইনস এলাকায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশ লাইনস এলাকার পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা সরকারি কলেজ ফটকের ভেতর মুখোশ পরে লাঠিসোঁটা ও রড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন ককটেলের বিস্ফোরণ হয়।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনটি কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ভাঙচুর করা বাসটি পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থী বহনকারী বাসের চালক আফজল মিয়া চৌধুরী বলেন, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে বাসটি পুলিশ লাইন এলাকায় এলে একদল ছেলে এসে বাস থামাতে বলে। এরপর শিক্ষার্থীদের বাস থেকে নেমে যেতে বলে। না নামাতে অতর্কিত পুরো বাস ভাঙচুর করা হয়।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অতর্কিত হামলা হয়েছে। কারা হামলা করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

কুমিল্লা : ১৩ মে ২০১৮ইং।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ