ভোটের প্রতিশ্রুতি চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, কক্সবাজারঃ বর্তমান সরকারের অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়ন এবং ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোটের প্রতিশ্রুতি চাইলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত রামুর পুনর্নির্মিত বৌদ্ধ বিহারগুলো উদ্বোধনের পর উখিয়া হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্যই তার দলের রাজনীতি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আগামী নির্বাচনে আপনারা নৌকায় যদি ভোট দেন, তাহলে যে সকল উন্নয়ন কাজ আমরা শেষ করতে পারিনি. সেগুলো শেষ করতে পারব। আর ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব, যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।”
বৃষ্টির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে জড়ো হওয়া উখিয়াবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “নৌকায় ভোট দেবেন কিনা ওয়াদা করেন।”
গত দুই সপ্তাহে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সাভারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকটি জনসভায় একইভাবে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা, যার সমালোচনায় বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী সরকারি খরচে বিভিন্ন জনসভায় ভোট চেয়ে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছেন।
অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলছে, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের বিষয়টি তারা দেখে না।
উখিয়ার জনসভায় নিজের সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরার পাশাপাশি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে ব্যবসা করার জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য নয়।”
বিগত সরকারের সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থেকে ‘কিছুই’ করেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু ও উখিয়া উপজেলার বৌদ্ধ বসতিতে সাম্প্রদায়িক তাণ্ডবের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে।”
হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আহমেদ শফীর প্রতি ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মহল ধর্মের নামে ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ দিয়ে নারীদের লেখাপড়া বন্ধ করতে চায়।
আর হেফাজতকে সমর্থন দেয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ারও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ইসলামে নারীকে মর্যাদা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন একজন নারী। প্রথম শহীদও একজন নারী।
“তত্ত্ব দিয়ে আমাদের দেশের নারীদের আটকানো যাবে না”, প্রত্যয় ঝরে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। তাহলে কেন এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে আঘাত করবে?”
সেনাবাহিনী ও বিজিবি কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মন্দির অল্প সময়ে পুনর্নির্মাণ ও মেরামত করে দেয়ায় তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু যে রামুতে বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়েছে তা নয়, মে মাসে আমরা আহ্বান জানালাম- আসেন আলোচনা করি। উনি সাড়া না দিয়ে আমাকে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিলেন। দাবি না মানলে আমাদের পতন ঘটাবে।
“তারপর ঢাকা ঘেরাও করল, বলল মিটিং করতে চায়, আমি অনুমতি দিলাম, মানুষের একটা অধিকার আছে।… কিন্তু তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিল, জায়নামাজ পোড়াল।”
গত পাঁচ মে রাজধানীর মতিঝিলে ওই ঘটনায় জামায়াত-শিবির ‘ক্যাডার’, হেফাজতের ‘হুজুর’ আর বিএনপির কর্মীরা মিলে শত শত কোরাআন শরিফ পুড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কোরাআন পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে কি ইসলামের হেফাজত করা যায়? যায় না।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমার পিতা চেয়েছে দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে, এটাই ছিল তার স্বপ্ন। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত দেশ গড়ার জন্যেই আমাদের রাজনীতি।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়ী করায় টেকনাফ-উখিয়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কক্সবাজারবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনেও ভোট চান শেখ হাসিনা।
আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে উখিয়া বঙ্গমাতা কলেজকে সরকারি করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা ভাষণ শেষ করেন এই বলে- “নিস্ব আমি রিক্ত আমি, দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।”
প্রধানমন্ত্রী উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় পৌঁছান বিকাল সোয়া ৪টার দিকে। সেখান থেকেই তিনি উখিয়া উপজেলার দীপাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহার, প্রজ্ঞামিত্র মহারত্ম সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, উত্তর বড় বিল বিহার, জাদি বৌদ্ধবিহার, পাইন্যাশিয়া বৌদ্ধ যুব কল্যাণ বিহার, রেজুরকুল সধর্মবিকাশ বৌদ্ধবিহার, শাসন তীর্থ সুদর্শন বৌদ্ধ বিহার, কক্সবাজারের খুরুশকুল-চৌফলদণ্ডী সংযোগ সেতু ও পেঁচারদ্বীপ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন।
এছাড়া কক্সবাজারের পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র, টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, টেকনাফ থানার সার্ভিস ডেলিভারি সেন্টার, চকরিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, কক্সবাজার টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, চিরিংগা খাদ্য গুদাম ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রশিক্ষণ একাডেমির ফলক উন্মোচন করেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, বিসিবি সভাপতি ও সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন, যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আহমদ হোসেন, কক্সবাজারের জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, সাংসদ এথিন রাখাইন, সাংসদ চেমন আরা তৈয়ব, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন।