ইমেজ সংকটে ইসি, প্রচারণায় সাংসদদের সুযোগ দিতে বিধি সংশোধন
আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : প্রচারণায় সংসদ সদস্যদের সুযোগ দিতে বর্তমান নির্বাচন বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্ষমতাসীনদের দাবির দেড় মাসের মাথায় ২৪ মে ২০১৮ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় সংশোধনী অনুমোদন করে ইসি। একজন নির্বাচন কমিশনারের তীব্র আপত্তির মুখে এ সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত ইসির ‘নিরপেক্ষতা’ প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ইমেজ সংকটে পড়বে। ইসির এই সিদ্ধান্ত লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আচরণ বিধিমালা-২০১৬ সংশোধনের প্রস্তাব ২৪ মে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর তার গেজেট প্রকাশ হবে। বর্তমান আচরণ বিধিতে সংসদ সদস্যদের প্রচারে নামার সুযোগ না থাকায় আওয়ামী লীগ এই আচরণ বিধি সংশোধনের দাবি তুলেছিল। ক্ষমতাসীনরা দাবি তুলেছিল- তাদের সংসদ সদস্যরা সিটি নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ না পেলেও বিএনপি সংসদে না থাকায় সে দলের নেতারা প্রচারে নামতে পারছে। এতে সবার সমান সুযোগ থাকছে না।
‘স্টেকহোল্ডার হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আচরণ বিধি সংশোধনীর এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তবে ইসির ২৪ মে’র এই আচরণ বিধিমালা সংশোধনীর বৈঠকে ‘সাংসদ সদস্যদের’ প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করে নোট অব ডিসেন্ট দেন ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
বিলুপ্ত স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবিসিনিউজবিডি’র এই প্রতিবেদককে (২৪ মে) বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে নির্বাচন কমিশন কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে গেল তা আমার বোধগম্য নয়। এমন সিদ্ধান্ত ইসির ‘নিরপেক্ষতা’ প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ইমেজ সংকটে পড়বে ইসি। সিটি করপোরেশনের আচরণবিধির এমন সংশোধনী ইসির ভাবমূর্তি সঙ্কট আরও ঘনীভূত করবে।’
সংসদ সদস্যদের প্রচারের বাইওে রেখে যে ইসি আচরণবিধি করেছিল, তখনকার নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আগে সব দল ও অংশীজনের মতামত নিয়ে আচরণ বিধি করা হল; অফিস অব প্রফিট পর্যালোচনা করে সংসদ সদস্যদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া হয়নি, যাতে ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকে নির্বাচনে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা (সংসদ সদস্যদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ) কোনোভাবেই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির এই সিদ্ধান্ত লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর একটি জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে কমিশনকেই উদ্যোগী হতে হবে। নতুন করে সংশোধনী এনে সাংসদদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে বৈষম্য বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন কখনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপক্ষো করতে পারবে না।’