একরাম হত্যার অডিও নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের সঙ্গে টেলিফোনে ‘শেষ কথোপকথনের’ এবং হত্যাকান্ডের সময় গুলির যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছে, তাতে পুরো মাদকবিরোধী অভিযান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
১ জুন ২০১৮ (শুক্রবার) এ অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
চারটি ক্লিপ মিলিয়ে ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে কয়েকজনের কণ্ঠ, গুলির শব্দ আর চিৎকার সাংবাদিকদের শুনিয়ে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম অভিযোগ করেছেন, তার স্বামীকে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।
একরামের পরিবারের দেওয়া ওই অডিও এবিসিনিউজবিডি যাচাই করতে পারেনি। তবে নিহত ্রকেরামের বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেছেন, একরামের ফোন খোলা ছিল বলে এ প্রান্তে পুরো ঘটনাপ্রবাহ রেকর্ড হয়েছে ফোনের অটোরেকর্ডারে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের সব হত্যাকান্ডের বিচারিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
আইনকে ‘পাশ কাটিয়ে’ কাজ করতে গেলে যে বিপদ ঘটতে পারে, একরামের ঘটনায় তা ‘স্পষ্ট হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।
আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান একে বর্ণনা করেছেন ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে।
গারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ১৫ দিনে নিহত ১২৬ জনের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক একজন, যিনি গত ২৬ মে রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে র্যাব জানায়। তবে নিহত একরামের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ বা মামলা ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম তার দুই মেয়েক নিয়ে ৩১ মে (বৃহস্পতিবার) কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ের কথা বলে সেই রাতে তার স্বামীকে ডেকে নিয়ে যায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। পওে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে একরামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
চারটি অডিও ক্লিপ সংবাদ সম্মেলনে শুনিয়ে আয়েশা বলেন, সেখানে শুরুতে মেয়ের সঙ্গে একরামের কথা, পরে তার নিজের কণ্ঠ রয়েছে। এরপর ও প্রান্তে গুলির শব্দ, পুলিশের সাইরেন, চিৎকার-হাঁকডাক ও গালিগালাজ এবং এ প্রান্তে নারী ও শিশুদের আহাজারি মিলিয়ে রোমহর্ষক এক পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যায় ওই অডি রেকর্ডে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অডিওটা আমরা শুনেছি। অনেক রকমের অডিও হয়, বিষয়টি আমরা দেখছি।’
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘আমি অডিওটি এখনও শুনিনি। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছে। যেহেতু এরকম একটি কথা এসেছে, এটা তো ইনকোয়ারি ছাড়া কিছু করা যাচ্ছে না। আমি বিষয়টি ইনেকোয়ারি করে দেখব।’