চাঞ্চল্যকর অনেক মামলা নেই সরকারের মনিটরিং সেলে

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ হত্যা, গুম ও অপহরনের অনেক আলোচিত মামলা স্থান পায়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের চাঞ্চল্যকর মামলার মনিটরিং সেলে। আর এ কারনেই মহাজোট সরকারের সময়ে সংঘটিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়ি চালক আলী আজমের গুম হওয়ার ঘটনা উদঘাটিত হয়নি। গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্তরা। তদন্তে নেমে এসছে চরম স্থবিরতা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের সময়ে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়ার বাসাায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। মহাখালীর আমতলী রোড থেকে গুম হন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। এর আগে রাজাবাজারের একটি বাসার সামনে থেকে গুম হন বিএনপি নেতা ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের গাড়ির চালক আলী আজম, ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালক আনসার আলী ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার ক’দিন আগে গুম হন যুবলীগ নেতা লিয়াকত। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত গুম বা নিখোঁজদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থান হয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মনিটরিং সেলে। তবে আর কাগজ কলমে সাগর-রুনী হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে মনিটরিং সেলে নেওয়া হলেও তা প্রকৃত পক্ষে চাঞ্চল্যকর মামলার হিসেবে গতি পায়নি।
তদন্ত সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ন এসব মামলার আলামতের সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে গেছে এসব মামলার সাক্ষীরাও। দেশজুড়ে তোলপাড় করা গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার ঘটনার সাক্ষীরা নিখোঁজ থাকায় তদন্ত আলোর মুখ দেখছে না।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন তার গাড়ি চালাক আনসার আলী। নিখোঁজ রয়েছেন ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নির্মানাধীন একটি ভবনের দারোয়ানসহ কয়েকজন। দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়ি চালক আলী আজমকেও পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় ৬ মাস ধরে। এছাড়া বিএনপি নেতা ও ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের গাড়ির ড্রাইভারকে এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না বলে তদন্ত সূত্র জানায়।
তদন্তকারী সংস্থাগুলো আরো ববলছে, আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তে সাক্ষী হিসেবে এই ব্যক্তিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও কিছু বলতে পারছেন না। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, ঘটনা ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুম করা হয়েছে তাদের স্বজনদের। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন অজানা আতংকে। গুপ্তহত্যার শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কাও বাসা বেঁধেছে তাদের মনে।
এদিকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডর শিকার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বাসার দারোয়ান হুমায়ুন কবিরকে দীর্ঘদিন পর পাওয়া গেলেও গতি আসেনি মামলার তদন্তে। অথচ তাকে পাওয়া গেলে সাংবাদিক দম্পতি হত্যা রহস্যের জট খুলবে বলে দাবি করা হয়েছিল তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। এখন আর তারা এবিষয়ে কিছু বলছে না। তাকে পেতে মোটা অংকের টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রাতে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফরুকের আটক হওয়ার পর থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার গাড়ির চালক আলী আজমকে। অথচ সেদিন রাতেই এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের জিএম ইউসুফ মৃধা, কমান্ড্যান্ট এনামুল হক ও চালক আলী আজম আটক হয়। পরদিন সকালে অন্যরা ছাড়া পেলেও আলী আজম রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। আলী আজমের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামে । ঘটনার পর ওই গ্রামেও তিনি যাননি। ছেলে নিখোঁজের পর থেকে বিছানাকে সঙ্গী করেছেন আলী আজমের বাবা দুদ মিয়া ও মা মাজেদা বেগম। দীর্ঘদিন পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলী আজমের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর থেকে আবারও আলোচনায় আসে রেল কেলেংকারির বিষয়টি। আদালত আলী আজমকে হাজির হওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেন। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও তাকে এ পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পায়নি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালক নিখোঁজ আনসার আলীর স্ত্রী মুক্ত বেগমও রয়েছেন অজানা আশংকায়। তিনি জানান, এক বছরের বেশি সময় পার হলেও তিনি তার স্বামীর খোঁজ পাননি। তিনি বলেন, ঘটনার রাত ১১টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি তার স্বামীর আর কোনো খবর জানেন না। পুলিশের পক্ষ থেকেও তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে তিনি জানান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তিনি অন্য সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার দুই বছরের শিশু সারাদিন বাবাকে খুঁজছে।
এ ঘটনার অন্য প্রত্যক্ষদর্শী বনানী থানার এএসআই মাহবুব ও আমতলায় নির্মানাধীন একচি ভবনের দারোয়ান কোথায় সে প্রশ্নের উত্তরও কেউ দিতে পারেননি। ঘটনার রাতে বনানী ২ নম্বর রোডে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের কাছ থেকে ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলী অপহরণের সময় ওই এলাকায় ডিউটিতে ছিলেন এএসআই মাহবুব। ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে তাকে দুই সপ্তাহের ছুটিতে পাঠানো হলেও তিনি আর বনানী থানায় যোগ দেননি। তিনি কোথায় আছেন তাও বলছেন না ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে দু’জনকে নামিয়ে নেয়ার পর তিনিই প্রথম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনানী থানার ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই এএসআই ছুটিতে চলে যান। এর আগে তিনি থানায় অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সেখান থেকেই তিনি ছুটিতে চলে যান।
সূত্র জানায়, ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার পরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে সেদিনের রাতে ঘটনার বর্ণনা দিলেও পরে আর মুখ খুলতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গুলশান জোনের এক কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, তিনি গুলশান জোনে যোগ দেওয়ার আগে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিতে গেছেন। দুই সপ্তাহের ছুটির পর এএসআই মাহবুবকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এ চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ