নির্যাতনে অস্থির কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্ররা ছাত্রলীগের হামলা ও নির্যাতনে অস্থির। তবুও তারা সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মুক্তি চেয়েছেন হামলা-মামলা-নির্যাতন থেকে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদেও পক্ষ থেকে ৭ জুলাই ২০১৮ (শনিবার) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের একজন নেতা তাদের দাবি-দফা উত্থাপনের পাশাপাশি কতটা নিরাপত্তাহীনতায় তারা ভুগছেন তার বর্ণনা দেন।
গত শনিবার কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিল। ছাত্রলীগের হামলায় সেই সম্মেলনটি হতে পারেনি। পুরো সপ্তাহজুড়েই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর গতকালই প্রথম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করল।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ৫৭ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের বাবা-মা ও স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র রাশেদের রাজমিস্ত্রি বাবা নবাই বিশ্বাস অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ফোনে রাশেদকে গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তাঁকে গালমন্দ করেছেন ‘কুলাঙ্গার’ ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য।
কর্মসূচি আহ্বানের এত দিন পর সংবাদ সম্মেলনের কারণ জানতে চাইলে, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র আতাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছি না। আমাদের নেতাদের প্রায় সবাই হয় কারাগারে, না হয় নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে। আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। এখনো গায়ে জ্বর। আমি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের আবাসিক ছাত্র। হলে ফিরতে পারছি না। জানি না সংবাদ সম্মেলন শেষে আমি যে জায়গা থেকে আজ এসেছি, সেখানে ফিরতে পারব কি না।’
আতাউল্লাহ জানান, গত ৩০ জুন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে ও পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে অনেককে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কারও কারও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ আহত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বের করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওপরের নির্দেশে তাঁদের রাখা যাচ্ছে না। বেসরকারি একটি হাসপাতালও যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক ওরফে নুরুকে মাঝরাতে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে বের করে দিয়েছে। মাহফুজ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নারীদের ওপর হামলা হয়েছে। থানায় ২৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুচলেকা দিয়ে একজন ছাত্রী বেরিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগ নেতা কারাগারে, নয়তো নির্যাতন ও মামলার বিড়ম্বনা এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের ফেসবুক পেজটি পর্যন্ত হ্যাক হয়ে গেছে। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।