শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, দর্শকের ভুমিকায় দায়িত্বশীলরা

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (১৫ জুলাই ২০১৮) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে এ হামলার ঘটনায় যাদের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার কথা, তারা সকলেই হাত-পা গুটিয়ে দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন। সুশীল সমাজের সমালোচনা চোখ বুজে হজম করছেন।

সরকারী চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের হামলা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। হামলার শিকার হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাড়ানোয় ১৫ জুলাই (রোববার) ঢাবিতে শিক্ষকদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন ঢাবি ক্যাম্পাসে সহপাঠির হাত ধরে চলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন দুই রশিক্ষার্থী। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ অনেক শিক্ষক লাঞ্চিত হয়েছেন সরকারের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনটির হাতে। বাদ যাচ্ছেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।

গত বছর রাজধানীর পল্টন মোরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাকে দ্রুত যেতে না দেওয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্টের ওপর হামলা করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রামে এক কোচিং সেন্টারের মালিকের ওপর হামলার ঘটনায় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কার করা হয়। সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এমন অনেক ঘটনার জন্ম দিয়ে চলেছেন। এসব দেখার বা লাগাম টেনে ধরার যেন কেউই নেই।

১৫ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দফায় দফায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বাধা দেওয়া হয়। দুপুরের দিকে এক পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মারমুখী আচরণ করে। তারা ছাত্রীদের মারধর করে। ধাওয়া ও হামলা চালিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি, ক্যাম্পাসে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কর্মসূচি দিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে তাঁরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই সেখানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। তারা শহীদ মিনারের বেদির সামনে শিক্ষক-ছাত্রদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
ছাত্রলীগের এই নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী পপি জানান, তাঁরা ১২০ জন ছাত্রলীগের সঙ্গে এসেছেন।

কর্মসূচিতে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দীন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ফাহমিদুল হক, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

এর এক দিন আগে ১৪ জুলাই শনিবারঢাবির ক্যাম্পাসে হাত ধরে চলার কারণে দু’জন শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। মারধরের ঘটনায় ঢাবির তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত তিনজন মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী।

১৫ জুলাই (রোববার) বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। বহিষ্কৃতরা হলেন- উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সিফাতউল্লাহ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মোহাম্মদ আল ইমরান, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের মাহমুদুর রহমান। তিনজনই প্রথম বর্ষের ছাত্র।

প্রক্টর বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, গণমাধ্যমের খবর এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ