তালহা ও মুক্তার হত্যার আসামি রাকিবকে নির্দোষ বানানোর চেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (২২ জুলাই ২০১৮) : রাকিব হাওলাদার ওরাফে ছোট রাকিবের পেশা ছিল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘিরে। বয়স আঠারোর কোঠা পেরুতেই রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় জড়িয়ে পরে হত্যা, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তালহা ও গাড়ি চালক মুক্তার হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল রাকিব। এ দুটি হত্যা মামলায় আটক আসামিরা সবাই ১৬৪ ধারায় রাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে চার্জশিট। সর্ব শেষ রাকিব হাওলাদার ওরাফে ছোট রাকিব চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ওয়ারী থানা এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে ক্রস ফায়ারে নিহত হয়। পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রাকিব নিহত হওয়ার পর থেকেই রাকিবকে নির্দোষ বানাতে মাঠে নামে রাকিবের মা রিতা হাওলাদার। নিহত রাকিবের প্রকৃত বয়স ২২ হলেও রিতা হাওলাদার গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে রাকিবের ১৪ বছরের একটি ছবি সরবরাহ করে তার নিহত পুত্র অপ্রাপ্ত এবং শিশু বলে দাবী করেন। প্রকৃত বয়স বেরিয়ে এলে নানা কল্পকাহিনী তৈরী করে তা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেন। একটি জাতীয় দৈনিকের একজন সাংবাদিকও রিতা হাওলাদারের সহযোগিতায় মাঠে নামেন। এর পরই ছিনতাইকারী রাকিবের হত্যার ঘটনা নিয়ে নানা রকম কল্পকাহিনী প্রকাশিত হয় কয়েকটি গণমাধ্যমে। ওয়ারী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলাও দায়ের করেন রিতা হাওলাদার।

একটি জাতীয় দৈনিকে রাকিবের বয়স ১৪ বছর উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের পর রাকিবের প্রকৃত ছবি পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়। এর পর সেই গণমাধ্যমে সংবাদটির সংশোধন করে পরের দিন ‘রাকিব শিশু নয়, তার বয়স ২২’ শিরোনামে সত্য সংবাদ প্রকাশ করা হয়। গত মাসে রাকিবের মা আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিও প্রত্যাহার করে নেন। তবে তার পরও ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র তালহা ও মুক্তার হত্যায় জড়িত রাকিবকে নির্দোষ বানানোর নানা চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তার মা।

রিতা হাওলাদার আজ ২২ জুলাই (রোববার) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনে রাকিব হত্যার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্রস ফায়ারে নিহত তার পুত্র রাকিবকে নির্দোষ দাবী করেন।

পুলিশের তদন্ত সূত্র জানায়, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র তালহা ছিলেন তার বাবার একমাত্র পুত্র। গত বছরের ৮ অক্টোবর ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় বাসার সামনে ছিনতাই হতে দেখে তিনি ছিনতাইকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এসময় তালহা একজন ছিনতাইকারীকে ধরেও ফেলেন। এটাই তার কাল হয়। আটক ছিনতাইকারীকে ছাড়িয়ে নিতে রাকিব তার ধারালো অস্ত্র দিয়ে তালহার পিঠে উপর্যপুরি আঘাত করে ছিনতাইকারীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে তালহাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তালহার মৃত্যুতে ওয়ারী ও তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

তালহা হত্যা মামলায় রাকিবসহ (১নং আসামি) তিনজনকে আসামি করা হয়। রাকিব পলাতক থাকলেও অপর দুই আসামিকে আটকের পর আদালতে সোপার্দ করা হয়। এই দুই আসামিই রাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এর পর রাকিব কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে চলতি বছরের ২ এপ্রিল ওয়ারী থানার জয়কালী মন্দির এলাকায় লেগুনার ড্রাইভার মুক্তারকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলায়ও রাকিবকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় আটক কয়েকজন আসামি রাকিবকে উল্লেখ করে তারা মুক্তারকে হত্যা করে বলে আদালতে জবানবন্দি দেন। মুক্তার হত্যার ঘটনার দু’দিন পর ৬ এপ্রিল রাতে ওয়ারী থানা এলাকায় ডাকাতির সময় রাকিব ক্রস ফায়ারে নিহত হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ