প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবার
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (২ আগষ্ট ২০১৮) : সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কলেজছাত্রী দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার মনের কথা খুলে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও তার সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে শেখ হাসিনা সম্পর্কে তার ধারণা পাল্টে গেছে। মিমের বাবা আগে জানতেন না শেখ হাসিনা এত সহজ, সরল, সাধারণ মানুষ, একেবারেই গ্রামের মানুষ, মাটির মানুষ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মিমের বাবা জাহাঙ্গীর তার এই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০টি দাবি করেছি। বিশেষ করে ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজের সামনে ওভারব্রিজ অথবা আন্ডারপাস দেয়ার কথা বলেছি। ঢাকার ভেতরে এবং বাইরের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস, দ্বিতলবিশিষ্ট বাস সার্ভিস দাবি করেছি। এটা হলে অভিভাবকদের আর কোনো টেনশন থাকবে না।
‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ড্রাইভার ও মালিককে আটক করা হয়েছে। ওনাদের বিচার হবেই। ইতোমধ্যে গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করেছি।’
‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলেছি, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ড্রাইভার যেন গাড়ি না চালায়, ছোট ছোট বাচ্চাদের দিয়ে লেগুনা চালানো হয়, যাদের বডির ফিটনেস গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স কোনোটাই নেই। যতদিন স্কুল-কলেজের সামনে ফুটওভারব্রিজ না হবে ততদিন বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ শিক্ষার্থীদের পার করে দেবে। আমার মেয়ে দিয়া ও অপর শিক্ষার্থী করিম যে জায়গায় অ্যাকসিডেন্ট করেছে, সেখানে দ্রুত একটি ওভারব্রিজ করলে আর দুর্ঘটনা ঘটবে না। যে ১০টি দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে করেছি তার প্রত্যেকটি দাবি মেনে নেবেন বলে আমাকে কথা দিয়েছেন তিনি’,- বলেন মিমের বাবা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যে সন্তান হারিয়েছি তাকে তো আর ফেরত পাবো না। তবে আমার মেয়ের সহপাঠীরা যারা আন্দোলন করছে, তাদের বলবো বাবারা তোমরা ফিরে যাও। তোমাদের আন্দোলনে কেউ ঢুকে অন্য কারও মায়ের কোল খালি হোক তা আমি চাই না।
তোমাদের যে দাবি, আমি প্রধানমন্ত্রীকে সব বলেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। তোমরা ঘরে ফিরে গিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দাও। আর আমার মিম ও করিমের জন্য দোয়া কোরো। আল্লাহর রহমতে আমরা ভালো বিচার পাবো। আমি এক সন্তান হারিয়েছি। যারা আছে তাদের যেন মানুষ করতে পারি এজন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুই পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনে দিয়েছেন। গুলশানের একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছেন। ওখান থেকে প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা পাবো, যা দিয়ে আমার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারবো। এ ছাড়া আমার বাকি সন্তানরা লেখাপড়া শেখার পর চাকরির আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জাহাঙ্গীর বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আমাকে এত সময় দেবেন ভাবতেই পারিনি। এছাড়া আমাদের জন্য দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। আমার এই দুঃসময়ে আমাদের দুটি পরিবারের পাশে উনি যেভাবে দাঁড়িয়েছেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।