সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’র চূড়ান্ত অনুমোদন
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (৬ আগষ্ট ২০১৮) : বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তবে খসড়া আইনানুযায়ী প্রাণহানির ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ ইচ্ছাকৃত ছিল তদন্তে তা প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী চালকের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
৬ আগষ্ট সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অনুমোদনের কথা জানান।
গত বছরের ২৭ মার্চ খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আইন মন্ত্রণালয় খসড়া আইনটি দ্রুত ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
‘দি মটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩’ যুগোপযোগী করে নতুন আইনটি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই আইনের মূল ফোকাস হচ্ছে- সড়ক ব্যবস্থাপনা, সড়কে যানবাহনগুলো কীভাবে চলবে সেই বিষয়ে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে খসড়া আইনের ১০৩ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন মোটরযান চালনাজনিত কোন দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩০২, ৩০৪ যেগুলো আছে। এটা অবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী এভিডেন্স বেইজসড হবে।
বোঝা যায় যদি সে স্বেচ্ছায় (দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণিহানি) কাজটা করেছে, ভলান্টারিলি (স্বেচ্ছায়) কাউকে সে পিষে দিলো এ রকম ঘটনা, এটা দণ্ডবিধি বা সংশ্লিষ্ট ধারায় এর শাস্তি হবে।’ ‘তদন্তে ডিসাইড হবে এটা কোন লাইনে যাবে, (দণ্ডবিধির) ৩০২ হবে নাকি ৩০৪ হবে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘খসড়ায় রয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে পেনাল কোডে সংশ্লিষ্ট সেকশন ৩০৪ (বি) এ যা কিছু থাকুক না কেন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা জনিত কারণে মোটরযান চালানোর কারণে সংগঠিত দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের আইনে আগে ছিল ৭ বছর, পরে সংশোধন করে এটাতে ৩ বছর করা হয়। এখন পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে সব শ্রেণির সর্বসম্মত মতো হল ৫ বছর।’
‘এখানে অর্থদণ্ডটা আনলিমিটেড, কোনো লিমিট করা হয়নি। সিচুয়েশনের ওপর নির্ভর করে অর্থদণ্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের ১০৩ ধারা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে প্রাণহানির ক্ষেত্রে তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ইন্টেনশন (ইচ্ছাকৃত) ছিল তবে এর শাস্তি ৩০২ ধারা অনুযায়ী হবে। এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ৩০৪(বি) এর শাস্তি বাড়িয়ে ৩ বছর থেকে ৫ বছর করা হয়েছে। এবং অজামিনযোগ্য করা হয়েছে, আগে জামিনযোগ্য ছিল।’
পার্শবর্তী দেশগুলোতে সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানি হত্যার পর্যায়ে গেলেই কেবল দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি হবে বলেও জানান সড়ক সচিব।