কারাগারে আছেন ২২ শিক্ষার্থী, হামলাকারীরা নিরাপদে
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (১৩ আগস্ট ২০১৮) : নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ মেধাবী ছাত্রের মুক্তি অনিশ্চিত। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের শিক্ষা জীবন। কবে নাগাদ জামিন মিলবে, বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জামিনে কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা তা জানেন না তাদের পরিবার। ১২ আগস্ট রোববার আদালত চার শিক্ষার্থীর পক্ষে জামিন চাওয়া হলে আবেদন তা নাকচ করে দেন। এদিকে মেধাবী ছাত্রদের ওপর হামলাকারীরা নিরাপদেই আছেন। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
কারাগারে থাকা ছাত্রদের অভিভাবকেরা বলছেন, তাদের সন্তানেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুলিশ কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তাদের গ্রেপ্তার করেছে। আর পুলিশ বলছে, ছাত্ররা যে সহিংসতায় জড়িত ছিল তার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এমন কোনো তথ্য তারা পায়নি। স্থায়ী ঠিকানা ধরে এখন এলাকায় তাদের বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
৬ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও আফতাবনগর এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। ওই দিন এই দুই স্থান থেকে বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ছাত্ররা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরদিন তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ভাটারা থানার পুলিশ ১২ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এর মধ্যে ৮ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। বাকি ৪ জন পলাতক। জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হাসান মাসুদ এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, তদন্ত চলছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সব ধরনের সহায়তা করছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট ভাটারা থানার একজন কর্মকর্তা এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। ফুটেজগুলোর মান ভালো হওয়ায় ওই দিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বও স্পষ্ট দেখা যায়। এসব ধরে তাঁরা একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাড্ডা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া বলেন, রিমান্ডে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ এবং ভাঙচুরের কথা শিকার করেছেন। তবে তাঁদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি এখনো তাঁরা স্পষ্ট নন। প্রত্যেক ছাত্রের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নেওয়ার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে তথ্য এলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।
ছাত্রদের মুক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাশফিকুর রহমান এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে কিছু জানায়নি।
আর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেলাল আহমেদ এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, সহায়তার বিষয়ে অভিভাবকেরা তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। করলে আইনের আওতায় থেকে যতটুকু সহায়তা সম্ভব তারা করবেন।
আটক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ মেধাবী ছাত্রের মুক্তি অনিশ্চিত। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের শিক্ষা জীবন। কবে নাগাদ জামিন মিলবে, বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জামিনে কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা তা জানেন না তাদের পরিবার। গত ১২ আগস্ট রোববার আদালত চার শিক্ষার্থীর পক্ষে জামিন চাওয়া হলে আবেদন তা নাকচ করে দেন।