লামায় দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষন, বিজিবি সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা
জেলা প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
বান্দরবান (২৫ আগস্ট ২০১৮) : বান্দরবানের লামায় দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে গত ২২ আগস্ট বুধবার রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুই সদস্য ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কাছে এই দুই কিশোরী ধর্ষণের কথা জানিয়ে থানায় মামলা করেছে।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আপ্পেলা রাজু নাহা জানান, ২৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের একটি বিজিবি ক্যাম্পের তিন সদস্য বুধবার রাত ১০টার দিকে অস্ত্রসহ ত্রিপুরাপাড়ায় যান। তাঁরা পাড়ার এক গৃহিণীর মাধ্যমে দুই কিশোরীকে পাড়া থেকে কিছু দুরে জঙ্গলে ডেকে নেন। সেখানে তিন বিজিবি সদস্যের একজন পাহারায় থাকেন। আর দুজন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীরা অভিযোগ করেছে, বিজিবি সদস্যরা দিদি সম্পর্কীয় এক প্রতিবেশীর মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তাদের দুজনকে পাড়ার বাইরে ডেকে নেন। তারা যেতে চাইছিল না। তখন দিদি তাদের বলেছেন যে না গেলে অসুবিধা হবে। এ কথায় ভয় পেয়ে তারা সেখানে গেছে। সেখানে গেলে বিজিবির সদস্যরা প্রথমে তাদের টাকা দিতে চান। রাজি না হলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দুজন বিজিবি সদস্য দুজনকে ধর্ষণ করেন। একজন তখন পাহারায় ছিলেন। পাড়ার লোকজন এগিয়ে এলে বিজিবি সদস্যরা পালিয়ে যান। বিজিবি সদস্যরা আবার চলে আসতে পারেন, এই ভয়ে সারা রাত তারা দুজনও জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে ভোরে পাড়ায় আসে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিমল ত্রিপুরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর মেয়েদের খোঁজ করতে এগিয়ে যাই। এ সময় একজন বিজিবি সদস্যদের একজন আমাদের বাধা দেন। তবে লোকজন আসায় সদস্যরা সরে যান।’ বিমল বলেন, তিন বিজিবি সদস্যকে স্থানীয় লোকজন চেনেন।
ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, ঘটনা যে একটা ঘটেছে, তা নিশ্চিত। তদন্তে সব কিছু জানা যাবে। বনফুর বাজারে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের ওদিকে যাওয়ার কথা নয়।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হোসেন মজুমদার বলেছেন, বিজিবি কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে তিন বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তারা বলেছে যে একজন পাহারায় ছিলেন। অন্য দুজন ধর্ষণের করেছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
বিজিবি নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান বলেছেন, রাতে বিজিবির একটি টহল দল স্থানীয় বনফুর বাজার এলাকায় ছিল। ত্রিপুরাপাড়ার দিকে তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল না। যে তিনজনের নাম বলা হচ্ছে, সেই নামে বনফুর ক্যাম্পে কোনো বিজিবি সদস্যও নেই। তারপরও ছদ্মনামে কোনো বিজিবি সদস্য সেখানে গেছেন কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। যদি তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সাজানো ঘটনা হলে এটি নিন্দনীয়।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, দুই কিশোরীর জবানবন্দির ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যা যা করার প্রয়োজন, তা করা হবে। দুই কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।