প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৩ লাখ টাকা লুট, অনেক প্রশ্নের হিসেব মিলছে না
মেহ্দী আজাদ মাসুম, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (২৮ আগস্ট ২০১৮) : প্রিমিয়ার ব্যাংক বাড্ডা শাখার ক্যাশ কাউন্টার থেকে অস্ত্রধারী এক ব্যক্তির ২৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সময় ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভুমিকা এবং ঘটনার পর তাদের দেওয়া বক্তব্যে অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে। কোন কিছুতেই মিলছে না এসব প্রশ্নের হিসেব। একজন অস্ত্রধারীর পক্ষে ব্যাংকে ঢুকে সকলকে একটি কক্ষে আটকে রেখে এতগুলো টাকা লুট করা এবং যাওয়ার সময়ে সিসিটিভির ডিভিআর খুলে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ঘটনার তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি নেই পুলিশের। তবে তদন্তে নেমে তারাও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে যথারিতি গোলকধাঁধায় পড়েছেন।
গত ২০ আগস্ট (সোমবার) রাজধানীর গুলশানের প্রিমিয়ার ব্যাংকে (বাড্ডা শাখা) এ লুটের ঘটনা ঘটে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ থেকে জানা যায়। অভিযোগে বলা হয়, এই দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ব্যাংক লেনদেনের সময় এক ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারের মাথায় পিস্তল ঠেকান। এরপর ব্যাংকের স্টাফদের ভল্ট রুমে ঢুকিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেন। যাওয়ার সময় অস্ত্রধারী ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রাখার ডিভিআর যন্ত্রটিও খুলে নিয়ে যান। পরের দিন মঙ্গলবার রাতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার (জেনারেল সার্ভিসেস ডিভিশন) রাহাত আলম বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা (মামলা নং- ১৮) দায়ের করেন।
এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘একজন অস্ত্রধারীর পক্ষে এতবড় ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিগ্নে ভেগে যাওয়া সম্ভব নয়। অস্ত্র হাতে কোন স্থানে ঢুকে কারো ওপরে গুলি চালিয়ে কেটে পড়া যতটা সহজ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঘটনা কিন্তু ততটা সহজ ছিল না।’
সাবেক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘টাকা লুটের ঘটনায় অনেকগুলো পার্ট ছিল। ১. অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকে প্রবেশ করা। ২. ম্যানেজারকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখান। ৩. সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভল্ট রুমে ঢুকানো। ৪. ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুটে নেওয়া এবং ৫. যাওয়ার সময়ে সুস্থ মস্তিষ্কে লুটের ঘটনার ফুটেজ নষ্টের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের সিসিটিভি ডিভিআর যন্ত্রটি খুলে নিয়ে যাওয়া! এত সব একজন অস্ত্রধারীর পক্ষে অসম্ভব। আমি বিশ্বাস করি- এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হলে প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।’
পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘ঘটনাটি অবশ্যই রহস্যে ঘেরা। ঘটনার সময় ব্যাংকের নিরাপত্তা-রক্ষিরা (গার্ড) কোথায় ছিলেন? একজনও কি দৌড়ে ব্যাংকের বাইরে যেতে পারেন নাই। সিসিটিভির ডিভিআর না হয় অস্ত্রধারী খুলে নিয়ে গেছে, কিনতু ব্যাংকের কেউই কি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে অস্ত্রধারীর একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ ধারণ করতে পারেন নাই? এ কারনেই ঘটনাটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।’ নিরপেক্ষ তদন্ত হলে এর আসল রহস্য উন্মোচিত হবে বলেও মনে করেন সাবেক এই কর্মকর্তা।