জামায়াতের নতুন কৌশল!
ঢাকা: দেশীয় গণমাধ্যমে যখন মার খাচ্ছে, অবস্থা শোচনীয়, তখন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ইকনোমিস্ট’ এর একটি সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনকে নিজেদের প্রপাগান্ডার অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
যার নমুনা পাওয়া গেল খোদ জাতীয় সংসদে পাঠানো তাদের দুটি প্যাকেটে।
রোববার জাতীয় সংসদের চতুর্থ তলায় সংসদ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে দুটি খাকি খাম আসে। প্যাকেট দুটি খুলে দেখা যায় তার ভেতরে গত বছরের ১৫-২১ ডিসেম্বরে প্রকাশিত দ্য ইকনোমিস্ট এর একটি সংখ্যার নমুনা কপি, বিচারপতি নিজামুল হক এবং আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপের একটি সিডি এবং নীল রঙের প্রচ্ছদে ২১ পৃষ্ঠার একটি বুকলেট রয়েছে।
খামের ভেতরে ইকনোমিস্ট এর একটি কাভার পৃষ্ঠা, একটি সূচিপত্র এবং বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। যেটি ছাপা হয়েছে ইকনোমিস্টের ৫৩ থেকে ৫৫ পৃষ্ঠাজুড়ে। ‘দ্য ট্রায়াল অব দ্য বার্থ অব আ নেশন’ শিরোনামের ওই খবরের সঙ্গে একটি সম্পাদকীয় নোটও দেয়া হয়েছে, যেখানে তারা বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামে অবস্থানরত আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপ কেন প্রকাশ করেছে, তার একটা কৈফিয়ত দিয়েছে।
ইকনোমিস্ট-এর ওই প্রতিবেদনে দুটি ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। একটি মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে আসা এবং অন্যটি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে বন্দী পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর দোসরের বন্দি হবার ছবি। এই প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও উত্থাপন করা হয়।
নীল রঙের প্রচ্ছদে ২১ পৃষ্ঠার ওই বুকলেটে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এবং বিচারক কর্তৃক স্বাক্ষী নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ, আহমেদ জিয়াউদ্দিন কর্তৃক চার্জ গঠনের আদেশ, ট্রাইব্যুনাল এবং প্রসিকিউশনের যোগসাজশ, নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপসহ পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বেশ কিছু অধ্যায় রয়েছে।
এইসব তথ্য, পত্রিকার খবর ও সিডি কে বা কারা পাঠিয়েছেন, তা নিশ্চিত নয়। কেননা খামে প্রেরকের কোনো নাম ঠিকানা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এই প্যাকেটগুলো পাঠানো হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া যে তাদের পক্ষে আছে, সেটি বোঝানোর জন্য তারা এগুলো পাঠিয়ে থাকতে পারে। আর দেশে হাতে গোনা দুয়েকটি সংবাদমাধ্যম ছাড়া যেহেতু অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই তাদের পক্ষে নেই, তাই সাংবাদিকদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তারা এসব পাঠিয়েছে বলে ধারণা করা যায়।