মিরপুর থানার চাঁদাবাজীর সেই মামলা নিয়ে তোলপাড়
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮) : যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘চাঁদাবাজী’র মামলার বিষয়ে মিরপুর থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাদীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তীব্র সমালোচনায় পড়েছে এই থানা পুলিশের ভুমিকা। এ নিয়ে সব মহলে তোলপাড় চলছে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে পুলিশ বাহিনীতেও। আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তে শীর্ষ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর পরিবহন শ্রমিক দুলালের নামে দায়ের করা একটি চাঁদাবাজীর মামলায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ‘বাদী আসামিকে চেনেনই না, অথচ আসামি কারাগারে’ এমন শিরোনামে গণমাধ্যমে এই মামলা নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বেড়িয়ে আসে এ ঘটনার মূল রহস্য। মলার বাদী পরিবহন শ্রমিক দুলাল গণমাধ্যমকে জানান, তিনি আসামিকে (মোজাম্মেল হক চৌধুরী) চেনেনই না। মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মিরপুর শাখার সভাপতি আবদুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন টাইপ করা একটি সাদা কাগজে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান বানানোর কথা বলে তার স্বাক্ষর নেন।
‘চাঁদাবাজীর’ আলোচিত এই মামলার বাদীর বক্তব্যের পর মিরপুর থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সব মহলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। বিষয়টি শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদেরও নজরে আসে। এ নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, পুলিশ তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান সব সময়ই সাধারণ মানুষের পক্ষে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যায়, অতি উৎসাহি হয়ে এমন কোন উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ নয়। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিৎ বলেও মনে করেন তারা।
বিশিষ্টজনরা মনে করেন, মিরপুর থানা পুলিশের ভুমিকায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় পুলিশ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে আটক করেছে।
এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, মিরপুর থানা পুলিশের এই মিথ্যা মামলা গ্রহন এবং মিথ্যা মামলায় মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে আটক করায় প্রশ্ন দাড়ায়- পুলিশ আসলে কোন পক্ষের? সাধারণ মানুষের, না সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের? তিনি মনে করেন, মিরপুর থানা পুলিশ জেনেই মিথ্যা মামলাটি গ্রহন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুজন সম্পাদক।
এদিকে মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির নেতারা অভিযোগে করে বলেন, তাকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করতে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে মোজাম্মেল হকের মুক্তিসহ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানা যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিরাপদ সড়কের দাবি ও যাত্রীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন, বিভিন্ন সভা সেমিনারসহ সড়কে দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছেন।
রিমান্ড আবেদনে যা বলেছিল মিরপুর থানা পুলিশ :
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন জানিয়ে মিরপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আসামি ১০/১৫ দিন যাবৎ বাদীর নিকট দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করিয়া আসিতেছে। চাঁদার টাকা না দিলে বাদী ও তার সংগঠনের বিরুদ্ধে মিডিয়াতে খারাপ প্রতিবেদন প্রকাশসহ বিভিন্ন ধরনের ভয় ভীতি দেখায়। এছাড়া ৩ সেপ্টেম্বর ফের দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে বাদী ভয় পেয়ে ১০ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি প্রদর্শন করে। আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে সহযোগী আসামিদের নাম ঠিকানা পাওয়া যাইবে। তাই আসামিকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’ আদলত পুলিশের এ আবেদনের পেক্ষিতে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।