গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে এনবিআর
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মুহাম্মদ ইউনূসের কর সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেই ব্যাখ্যা ‘সন্তোষজনক’ না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন।
নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে রোববার দুপুরে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
গোলাম হোসেন বলেন, “আমরা ইউনূস সাহেব নন, গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাইব। তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
কবে চাওয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই।”
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ইউনূস ওয়েজ আর্নার হিসেবে কত টাকা বিদেশ থেকে এনেছেন এবং তিনি তা আনতে পারেন কি না, এনে থাকলে কী পরিমাণ কর অব্যাহতি নিয়েছেন- এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে ২০১২ সালের ২ আগস্ট এনবিআরকে প্রতিবেদন দিতে বলে মন্ত্রিপরিষদ।
এর ভিত্তিতে এক বছর তদন্ত চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে এনবিআর ও আইআরডি। সোমবার আইআরডির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়।
ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, ইউনূসের বিরুদ্ধে কর সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর। আর ব্যাংকের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ।
কর সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ধারণা, এনবিআর তাকে একটি নোটিস দিতে পারে, সেই নোটিসে তিনি কেন এটা করেছেন এবং কেন অনুমতি নিয়ে যাননি সেটা জানতে চাওয়া হবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “তদন্তে গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে অন্য যে সব অভিযোগ উঠেছে, সে সব বিষয়ে সরকারের অন্য সংস্থা ব্যবস্থা নেবে। আমরা শুধু কর সংক্রান্ত বিষয়গুলোই দেখব।”
তদন্ত প্রতিবেদনে আইআরডি বলেছে, “আয়কর অব্যাহতির যে সুবিধা ইউনূস নিয়েছেন তা বিধিসম্মত হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক আইনে ব্যাংককে আয়কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, ব্যাংকের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে নয়।”
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ইউনূসকে সরকারি কর্মচারী উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হিসাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তিনি তা নেননি।
২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউনূস ১৩৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী, ১০টি পুরস্কার এবং ১৩টি রয়্যালটি পেয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ।
ইউনূসের এসব অর্থের বিষয়ে আয়কর রিটার্নে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তাকে শর্ত সাপেক্ষে আয়কর রির্টার্ন দেয়া হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ওই শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্নে এই তথ্যগুলো আসেনি।
“আয়কর রিটার্নে সঠিকভাবে তথ্য পরিবেশন না করা আইনের লঙ্ঘন। যারা এই রিটার্ন তৈরি করেছেন, তারা যেমন এজন্য দায়ী এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসাবে তিনিও (ইউনূস) এই দায় এড়াতে পারেন না।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “দায়িত্বে থাকাকালে ইউনূস ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে ঋণ দেন। এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আছে। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।”
গ্রামীণ ব্যাংকের পদ থেকে অপসারণের পর সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এই নোবেলজয়ীর রাজনৈতিক অবস্থান জানানোর প্রেক্ষাপটে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
তিন বছর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের নানা পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছিলেন ইউনূস।
এক্ষেত্রে বিএনপির সমর্থন পাওয়া ইউনূস গত মাসেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান, যে দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে প্রধান বিরোধী দল।
রাজনৈতিক অবস্থান জানিয়ে ওই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর মধ্যেই ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।