ইউনূসের দাবি অভিযোগ ভিত্তিহীন

Grameen Bank dr. muhhad yunus মুহাম্মাদ ইয়ুনুসরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ যে সব অভিযোগ এনে মন্ত্রিসভা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ইউনূস সেন্টার।

সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর রাতে এক বিবৃতিতে ইউনুস সেন্টারের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

নোবেলজয়ী ইউনূস এই সেন্টারের প্রধান। বিভিন্ন বিষয়ে ইউনূসের অবস্থান জানিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউনুস সেন্টারের কর্মসূচি কর্মকর্তা শারমিন ফেরদৌসের পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশ অনুসারে ২০০০ সালের পর থেকে মুহাম্মদ ইউনূস ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না।

“যদি পাবলিক সারভেন্ট না থাকেন, তবে ২০০০ সালের পর প্রফেসর ইউনূসের বিদেশি আয় গ্রহণ ইত্যাদি ব্যাপারে আর সরকারের অনুমোদন নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। একজন প্রাইভেট নাগরিকের জন্য যে আইন প্রযোজ্য, সে আইনই তার ওপর প্রযোজ্য হবে।”

“অতএব এনবিআর যে অভিযোগ করছে, সে অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।”

নিয়ম ভেঙে আয়কর অব্যাহতি নেয়া, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনার কথা জানিয়েছে সরকার।

২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ার পর অনিয়ম অনুসন্ধানের জন্য এনবিআরকে নির্দেশ দেয় সরকার।

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ইউনূস ওয়েজ আর্নার হিসেবে কত টাকা বিদেশ থেকে এনেছেন এবং তিনি তা আনতে পারেন কি না, এনে থাকলে কী পরিমাণ কর অব্যাহতি নিয়েছেন- এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়।

এর ভিত্তিতে এক বছর তদন্ত চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। আইআরডির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি  উপস্থাপনের পর মন্ত্রিসভা নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আইআরডি বলেছে, “আয়কর অব্যাহতির যে সুবিধা ইউনূস নিয়েছেন তা বিধিসম্মত হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক আইনে ব্যাংককে আয়কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, ব্যাংকের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে নয়।”

গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ইউনূসকে সরকারি কর্মচারী উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হিসাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তিনি তা নেননি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ইউনূস সাহেব ওয়েজ অর্নার হিসেবে ট্যাক্স ফ্রি সুবিধাসহ গ্রামীণের নামে তার নেতৃত্বাধীন অনেক প্রতিষ্ঠানের কর সুবিধা নিয়েছেন, যেগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান নয়।”

ইউনূস সেন্টারের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, “গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিশেষ আইন-সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। এই আইনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদই ব্যাংকের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। প্রফেসর ইউনূস যা কিছু করেছেন, এর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ও সম্মতি অনুসারে করেছেন”।

গ্রামীণ ব্যাংকের আইনও ভঙ্গ করে কোনো কাজ হয়নি বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইর ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউনূস ১৩৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী, ১০টি পুরস্কার এবং ১৩টি রয়্যালটি পেয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

ইউনূসের এসব অর্থের বিষয়ে আয়কর বিবরণীতে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তাকে শর্ত সাপেক্ষে আয়কর রির্টার্ন দেয়া হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ওই শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্নে এই তথ্যগুলো আসেনি।

ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রফেসর ইউনূস বিদেশে থেকে যে সব খাতে আয় করেন সেগুলো হলো বক্তৃতা, তার লিখিত বই এর রয়্যালটি, এবং পুরস্কার, যা কর মুক্ত আয় হিসাবে তিনি প্রচলিত আইন অনুসারে দেখাতে পারেন যদি তা ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসেন।”

“প্রফেসর ইউনূস সব সময় তার বৈদেশিক আয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী এনেছেন।”

“প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় সব আয় এনবিআরকে প্রদর্শন করে যে কর ধার্য হয়েছে, তা পরিশোধ করেছেন ইউনুস।”

এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার ব্যর্থতা ইঙ্গিত করে বিবৃতিতে বলা হয়, “যারা কর ধার্য করেন, তাদেরই দায়িত্ব হল কোনটি আয়করমুক্ত এবং কোনটির কর দিতে হবে। কর কর্তৃপক্ষ কোনোদিন এ ব্যাপারে কখনোই প্রশ্ন করেনি।”

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ