যশোরে দায়ের হওয়া ৫ মামলায় ১৬ শিক্ষকসহ ১১২ জনের জামিন
আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (৯ অক্টোবর ২০১৮) : যশোরের বাঘারপাড়ার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক শামীম মিঞা (৪৫)। তাঁর দাবি, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। অথচ বাঘারপাড়া থানা-পুলিশ তাঁর নামে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাশকতার মামলা দিয়েছে। যশোর থেকে এসে ৮ অক্টোবর সোমবার হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান আসামি শামীম। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন।
মাদ্রাসাশিক্ষক শামীমের মতো যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার পৃথক আরও দুটি নাশকতার মামলায় আরও ১৫ জন শিক্ষক হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। এ ছাড়া যশোরের কোতোয়ালি, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার পৃথক পাঁচটি নাশকতার মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন আরও ৯৬ জন।
আসামিদের আইনজীবী আসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা মামলায় যশোরের কোতোয়ালি, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার পৃথক পাঁচটি মামলায় শিক্ষকসহ ১১২ জনকে হাইকোর্ট আগাম জামিন দিয়েছেন। আদালতকে তিনি বলেছেন, নাশকতার নামে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে যশোরের কোতোয়ালি থানায় দুটি, বাঘারপাড়া থানায় দুটি এবং অভয়নগর থানায় একটি নাশকতার মামলা করে। মামলাগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে করা হয়েছে। ৫টি মামলায় ৩৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। যশোর থেকে জামিন নিতে আসা শিক্ষকসহ অন্তত ৩০ জন আসামি হাইকোর্ট এলাকায় প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অথচ পুলিশ গায়েবি মামলা দিয়েছে।
তবে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসাশিক্ষকদের নামে আসামি করা হয়েছে। অভয়নগর থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, যেসব শিক্ষক নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে। কোতয়ালি থানার একটি নাশকতার মামলায় জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০) নামের একজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার আসামি ও যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, জাহাঙ্গীর মারা গেছেন গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর। নাশকতার কোনো ঘটনাই ঘটেনি অথচ পুলিশ গায়েবি মামলা করছে। মৃত মানুষকেও আসামি করেছে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি অপূর্ব হাসান এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, এ আসামি মৃত হলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
আজ হাইকোর্টে দেখা যায়, সকাল ১০টার পর থেকে যশোর থেকে আসা নাশকতার মামলার আসামি শিক্ষকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে জড়ো হন। সেখানে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক, বাঘারপাড়া বিএনপির সভাপতি টি এস আয়ুবসহ অন্য বিএনপি নেতাদের দেখা যায়।
বিএনপি নেতা টি এস আয়ুব হাইকোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ এলাকার নিরীহ শিক্ষক, ক্ষেতমজুর, দিনমজুরসহ বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে। এলাকায় থাকতে না পেরে বাধ্য হয়ে শিক্ষকসহ যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা সবাই হাইকোর্টে এসেছেন। টি এস আয়ুব জানান, পাঁচটি মামলায় তিনিসহ ২৩৬ জন আসামি যশোর থেকে আগাম জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে এসেছেন। ১১২ জনের জামিন হয়েছে। আজ অন্যরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করবেন।
জামিন পাওয়া শিক্ষক : সোমবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান বাঘারপাড়ার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ইউনূস আলী, শামিম মিয়া, আমান উল্লাহ, হাফিজুর রহমান, তবিবার রহমান, বদিয়ার রহমান, সানাউল্লাহ, জিল্লুর রহমান, অলিয়ার রহমান, আমিনুর রহমান, ময়েন উদ্দিন ও বাকি বিল্লাহ। আর অভয়নগরের মামলায় জামিন পাওয়া শিক্ষক হলেন ফিরোজ মাস্টার, আজিজুর রহমান, আজিমুল হক ও মঞ্জু মাস্টার। জামিন নিতে আসা শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে তাঁরা হাইকোর্টে এসেছেন।