আবাসন ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশায় মন্ত্রী
সাইফুর রহমানঃ
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম বলেছেন, বাংলাদেশের আবাসন ব্যবস্থায় আমরা একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চাই। ঝিলমিল প্রকল্প, পূর্বাচল প্রকল্প, উত্তরা ৩য় ফেজ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন হাউজিং প্রকল্প, উত্তরায় পরিকল্পনাধীন হাই রাইজ বিল্ডিং প্রকল্প, এসব ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসছেন। আমরা কাজ করতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চাই। মানুষই আমাদের বড় সম্পদ।
৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীর উত্তরার ১৮ নং সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্প পরিদর্শনকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্প পরিদর্শনকালীন অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে মন্ত্রী আরো বলেন, অদূর ভবিষ্যতে পূর্বাচল হবে স্যাটেলাইট সিটি, যে সিটি আমাদের প্রতিবেশী কোনো দেশ দেখেনি। উত্তরা ৩য় ফেজ হবে একটি আধুনিক নগর, যেটি দেখে মানুষ বিস্মিত হবে, বাংলাদেশের ভেতরে এত উন্নত ও পরিকল্পিত নগর কিভাবে সম্ভব। সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যান্ডেট উল্লেখ করে মন্ত্রী প্রাসঙ্গিকভাবে বলেন, আমরা চাই দেশের সকল মানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে। এ ম্যান্ডেটে কারো কোনো গাফিলতি প্রতাশা করিনা বলে মন্ত্রী আরো বলেন, কারো কোনো গাফিলতি দৃশ্যমান হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দায়-দায়িত্ব অবশ্যই নিতে হবে। কোনোভাবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাজের ব্যত্যয় হবে, এটা আমি চাই না। দিন রাত কাজ করতে হবে। দেশের জন্য জনবান্ধব কাজ করে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে বলে মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অঙ্গীকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং আধুনিক রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সকল নাগরিককে নিশ্চিত করা। নাগরিক দয়ার পাত্র নয়, নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। তার মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো, আবাসন।
মন্ত্রী বলেন, বাসস্থানের পরিকল্পিত, পরিবেশসম্মত ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, বাংলাদেশের একটি মানুষও বাসস্থানের অভাবে থাকবে না, কোনো মানুষই যেনো ভাসমান না থাকে।
মন্ত্রী আরও বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭০ সালের মতো বিশাল ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করেছেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তসীমায় বসবাস করা মানুষের জন্য স্বল্পসময়ের মধ্যে নিরাপদ, পরিবেশসম্মত বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরো বলেন, যারা ছিন্নমূল, তাদের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে, নির্মাণাধীন প্রকল্প রয়েছে এবং কোথাও কোথাও সম্পন্নও করা হয়েছে। একজন লোকও ঢাকার রাস্তায়, শহরের রাস্তায় বা গ্রামে কারো বাড়ির পাশে ঘুমিয়ে থাকবে না, তার জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। অতীতের কোনো সরকার বস্তিবাসীদের জন্য সরকারিভাবে কোনো আবাসনের পরিকল্পনা নেয়নি, ভিক্ষুক থেকে শুরু করে বিশেষ পর্যায়ের মানুষের জন্য এত চমৎকার ব্যবস্থা যে, তারা স্বল্পমূল্যের ভাড়া দিয়ে সারাজীবন বিল্ডিং এ বসবাস করবে, সে পরিকল্পনা নিয়ে অনেক প্রকল্প নির্মানাধীন রয়েছে, যেগুলো দ্রুত গতিতে শেষ করা হবে। শহরের নাগরিক সুবিধাকে গ্রামে পৌঁছে দেয়া, নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, সে অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নাগরিক সুবিধা শহরে যেটা আছে, তা গ্রামে পৌঁছে দেয়া হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শহরের মানুষরা শুধু নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে, গ্রামের মানুষরা কেনো নয়। গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের প্রয়োজনীয় অন্যান্য দাপ্তরিক সুবিধা নিশ্চিত করে নগরের সুবিধা আমরা গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। গ্রামে আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে, পানির সংযোগ থাকবে, গ্রামে আধুনিক বিপনী বিতান হবে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে না পারলে মানুষের উপচে পড়া ভিড় শহরে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, যে আর শৃংখলা রক্ষা করা যাবে না। শেখ হাসিনা সরকারের ওপর মানুষ আস্থা রেখেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে এনেছেন, ভবিষ্যতে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষের গড় আয় বেড়েছে, শিশু মৃত্যু ও মাতৃমূত্যুর হার কমেছে, সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
সদিচ্ছা, সততা, আর জনশক্তি থাকলে একটি রাষ্ট্র উন্নত রাষ্ট্র হতে কোনো বাধা হয় না, প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্ধৃতি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাঁর কেবিনেটের সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি, আমরা নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রধানমন্ত্রীর আস্থা রক্ষা করতে সক্ষম হবো।
বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কেবিনেটের মেম্বার হিসেবে আপনাদেরকে আহ্বান, আপনার অনেক সম্মান পেয়েছেন, অনেক পদ পেয়েছেন, বড় চেয়ার পেয়েছেন, ভালো বেতন পেয়েছেন, আপনার বাসস্থানের সংস্থান করা হয়েছে, আপনার দায়িত্ব এখন তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলোর, অসহায়, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলোকে সেবা প্রদান করা। কখনোই নিজেকে মালিক ভাববেন না, কখনোই নিজেদেরকে কর্তা না ভেবে, ভাবতে হবে আপনি সেবক। তিনি আরও বলেন, আমি নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করিনা, মনে করি দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমার দায়িত্ব দেশের জনগণের সেবা করা। সেবার মনোভাব রাখলেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। আত্বঅহমিকা কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত না। নাগরিকের প্রতি, দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে পদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, দেশকে মায়ের জায়গায় বিবেচনা করবেন। বাড়ির পাশে যে মানুষটি রিকশা চালায়, সে আপনার স্বজন, তার প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থাকতে হবে। দুর্নীতি, আর অনিয়মকে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, মনে রাখতে হবে, আমরা পরিচ্ছন্নতা দিয়ে এমন একটি জায়গা সৃষ্টি করতে চাই, যেনো মানুষ আমাদের সততা নিয়ে প্রশংসা করে। সততার পাশাপাশি কর্মস্পৃহা থাকতে হবে। সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব সাধারণ ও সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব। ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আমি চাই একটি টিম ওয়ার্ক করতে। আমি চাই ভালো কাজের একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা হোক। পূর্ত বিভাগ, রাজউক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সবার মধ্যে একটি ভালো কাজের প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। দপ্তর প্রধানদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনার কাজের গতির উপর নির্ভর করবে, আপনার অধিনস্থরা কিভাবে কাজ করবে। গতানুগতিক কাজের মধ্যে দায়িত্ব সম্পন্ন হয়না। আমি আশা করি সম্পূর্ণ আন্তরিকতা, একাগ্রতা এবং সততা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্প পরিদর্শনকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক-এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আব্দুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী জনাব মোঃ সাহাদাত হোসেন, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব তাকসিম এ খান, ডেসকো এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদ সারোয়ার, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার উর্দ্ধতন ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।