তিনটি ধাপে প্রত্যাশা পুরন করবেন মেয়র আতিকুল
সাইফুর রহমান : শর্ট-টার্ম, মিড-টার্ম এবং লং-টার্ম এ তিনটি ধাপে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরন করবেন বলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান।
২ মার্চ (শনিবার) দুপুরে় রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ ক্লাব আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে এসব কথা বলেন।
শুরুতেই মেয়র শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করে বাঙ্গালী জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহনের সাথে সাথেই জনগণের সেবা করা শুরু করব।আরো গভীরভাবে স্মরণ করেছেন ১৫ই আগস্ট ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারানো বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদকে, জাতীয় চার নেতা কে, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে।
একই সাথে মেয়র পদে তাকে মনোনিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে জনগনের সেবা করব।
একইসাথে তাকে বিজয়ী করার জন্য নগরবাসীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জন্মদিনের এ মাসের বিজয় শুধু আমার নয়, এই বিষয়ে আপনাদের ও, এ বিজয় আমাদের সবার। এই জয় ঢাকার নতুন দিনের পথ চলা প্রথম পদক্ষেপ। গন্তব্য আমাদের একটাই, “একটি সুস্থ, সচ্ছল ও আধুনিক ঢাকা” গড়বার।
নির্বাচন এর সমন্বয়ক কর্নেল ফারুক খান এমপি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আবারো সবার প্রতি প্রত্যাশা করেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর দখলমুক্ত করার ও ট্রাক স্ট্যান্ড দখলমুক্ত করার অসমাপ্ত কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে সাথে নিয়ে যাব।
আতিকুল ইসলাম এসময়ে বলেন, স্বপ্নের সেই ঢাকার দিকে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ, কিন্তু পথের শেষে অপেক্ষমান আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা। এ যাত্রার হাল ধরে ঢাকাবাসীকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনার আমার হাতে দিয়ে আমাকে দিয়েছেন এক বিরল সম্মান। কিন্তু এর সাফল্যের দায়ভার আপনার, আমার, আমাদের সবার।
তিনি আরো বলেন, সাফল্যের প্রথম শর্ত, এ যাত্রা হতে হবে সম্মিলিত, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে হাতে হাত রেখে। দ্বিতীয়ত, নগরবাসীর হিসেবে আপনাদের যেমন রয়েছে অনেক অধিকার, তেমনি নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের রয়েছে এই নগরীর প্রতি দায়বদ্ধতা। আপনার নাগরিক দায়বদ্ধতাকে নগরীর প্রতি আপনার ভালোবাসা তে রুপান্তর করুন। তৃতীয়ত, এ যাত্রায় সঙ্গী অংশীদার হিসেবে আমাদের প্রয়োজন ডিএনসিসি, ডিএসসিসি, ডিএমপি এবং অন্যান্য সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি বর্গ কে। এবং দল-মত নির্বিশেষে সকল রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সমাজের গণ্যমান্য সদস্য সবাইকে আমাদের প্রয়োজন, একথা নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আসুন বিভেদ ভুলে আমরা যোগ দেই ঢাকার এই অগ্রযাত্রায় যা আমাদেরকে নিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত সেই আগামীর দিকে, এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যাই ঢাকা কে এর নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
এ পর্যায়ে মেয়র তার লক্ষ্যগুলোকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আগামী এক বছরের পরিকল্পনার কথা জানান নগরবাসীর উদ্যেশে।
কর্মসূচি:
-ঢাকা উত্তর কে আলোকিত ঢাকায় পরিণত করা
-পরিবেশ দূষণ রোধ করা
-মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে “নগর অ্যাপ” কে সক্রিয় করা
-সকল প্রকার কর ও সকল লেনদেন digitize ও automate করা
-বৃক্ষরোপণ, নগর বনায়ন ও নগর কৃষির বিস্তার ও বিকাশ, এলাকার মহল্লায় উন্মুক্ত পার্ক ও খেলার মাঠ ঘুরে একটি “সবুজ ঢাকা” গড়ে তোলা
-ফুটপাত নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া
-সড়ক নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা
-নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা
-প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের শুরু করা কাজগুলোকে সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা
এছাড়াও নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সংযুক্তিকে উত্তর ঢাকা আজ আকারে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, উন্নয়নের সম্ভাবনার হাতছানি তে আমাদের কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছে নতুন মাত্রা। কিন্তু ছোট ছোট লক্ষ্যগুলোকে অর্জন করতে না পারলে বড় বিষয় গুলো রয়ে যাবে আমাদের হাতের নাগালের বাইরে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র নির্বাচনী ইশতেহার এর কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, একটি দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত এবং সুস্বাস্থ্য রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশকে একদিন গড়ে তুলবেন প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে এবং ঢাকা হবে সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের রাজধানী। গত নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয় জাতির প্রত্যাশা রোদ উঠেছে আরো উঁচুতে, তাই জাতির কাছে আজ আমাদের দায়বদ্ধতা বেড়ে গেছে বহুগুণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পাতাল রেল সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে এবং প্রত্যাশা পূরণের একটি প্রাথমিক দৃপ্ত পদক্ষেপ।
ঢাকা শুধু আমার শহর নয়, এ শহর আপনারও। আমাদের সামান্য সচেতনতা এবং একটু সহযোগিতা এই নগরীর প্রাপ্য। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই যে যার জায়গা থেকে আমাদের ন্যূনতম করণীয় তা যদি করে যাই, তাহলে আমরা পাব সত্যিকার অর্থে আমাদের অতিকাঙ্ক্ষিত আধুনিক, গতিময় এবং প্রগতিশীল নগরী।
এছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এই সময় তার সাথে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানও(এমপি) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের এক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের যারা জড়িত আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন রাস্তা ঘাটের কাজ করার সময় জনগণের ভোগান্তি যেন কম হয় সেদিকে যেন খেয়াল রাখে।
এ সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন থেকে নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম কে ফুলেল সংবর্ধনা দেয়া হয়।