কৃষি জমি এবং জলাধার নষ্ট না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী’র
সাইফুর রহমানঃ নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরসহ জলাধারগুলো রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সভ্যতা জলধার এর কোল ঘেষেই গড়ে উঠেছে এবং বিশ্বে কোনদিনই খাদ্য শস্যের চাহিদা শেষ হবে না। তাই আমাদের এ দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি আহবান জানান।
২ মার্চ (শনিবার) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর ৫৯ তম কনভেনশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রায় সবগুলো প্রকল্পই আপনার পরিচলনা করেন, কৃষি জমি এবং জলাধার নষ্ট করে প্রকল্পের বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। সারাদেশে সবগুল পুকুর, খাল, বিল খননের এবং নদ-নদীগুলর তলদেশ ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর পাশাপাশি মেইনটেনেন্স ড্রেজিং এর মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। মহাসড়কগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশে জলাধার থাকা প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি যেন জমে না থাকে, দুর্ঘটনা,ভূমিকম্প, ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস সহ প্রানীজ আমিষের চাহিদা পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলন থেকে প্রকৌশলীদের সেই কৌশল খোঁজার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আমাদের দেশের মাটি, মানুষ, জলবায়ু, আবহাওয়া সব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে আমরা উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের নিজেদেরই কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা নতুন দরজা আমাদের সামনে খুলে দিতে পারে। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে নিজেরা কাজ করতে পারছি। উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ছে। কাজেই গবেষণাটা প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনা ও মিতব্যয়ী হয়ে সব সময় উন্নয়ন পরিকল্পনা করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে জলবায়ু, ভৌগলিক অবস্থান, আমাদের মাটি-পানি সব কিছুর কথা। মাটি ও মানুষের কথা ভেবে সব পরিকল্পনা নেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করা, সেভাবে খুব মিতব্যয়ী হয়ে, স্বল্প খরচে সর্বোচ্চ উন্নতি দেশের জন্য করতে পারি সেই কথা সব সময় চিন্তা করতে হবে। ।
বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে ১০০ টি অথনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আমরা কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করি এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের ভূখণ্ড খুব সীমিত। লোক সংখ্যা বিশাল। সীমিত ভূমিতে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে, পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনমানও উন্নত করতে হবে।
এগিয়ে চলা বিশ্ব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কিভাবে আরো উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে সেই উপায় উদ্ভাবনে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আইইবির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, আইইবির ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়ালিউল্লাহ সিকদার।
দেশের প্রতিটি মহাসড়কের পাশে আলাদা সার্ভিস রোড করতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমার নির্দেশ ছিল, এটা আমরা করতে শুরু করেছি। মহাসড়ক হবে তার পাশে আলাদাভাবে সার্ভিস রোড করা। যাতে স্থানীয় যোগাযোগ ও স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা রাস্তা করে দেওয়া। তাতে দুর্ঘটনাও কমবে, যাতায়াতও দ্রুত হবে। স্থানীয় মানুষের যাতায়াতও সহজ হবে।
যততত্র সড়ক না করে পরিকল্পিতভাবে করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়নে মহাসড়কের উন্নয়ন, সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক নিয়ে যেতে সরকারের উদ্যোগ, বুলেট ট্রেন চালুর পরিকল্পনা, নৌপথগুলোকে সচল করতে ড্রেজিংসহ বিভিন্ন উদ্যোগসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এখন মহাশূন্য গবেষণা, নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চিন্তা করতে হবে।
মহাশূন্য গবেষণা ও নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। আমি মনে করি ভবিষ্যতে আমরা হয়তো স্পেস (মহাশূন্য) নিয়ে গবেষণা করতে পারবো।
তিনি বলেন, স্পেস সেন্টার করে সেখানে আমরা যেন আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারি, সেই দিকেও আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আমরা কারো কাছ থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন সারাবিশ্বে দৃশ্যমান। তবে অনেকেই বিস্মৃত হয়ে থাকেন যে এত অল্প সময়ে কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে এতটা উন্নত করতে পারলাম। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য একটাই ছিল- এর জন্য কোনোকিছু লাগে না। একটা জিনিসেই আমরা মনে করি যে একটা রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও তাদের প্রতি ভালোবাসা, তাদের জীবনমান উন্নত করার যে পরিকল্পনা বিশেষ করে মানুষের কাছে দেওয়া আমাদের ওয়াদা রক্ষা করা- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর পর ৯৬ পর্যন্ত যে উন্নয়নটা আমাদের হওয়ার ছিল সেটা কিন্তু হয়নি। দেশ যদি সঠিক নেতৃত্বের হাতে থাকতো- জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকতেন বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেতো।
ই-গভর্নেন্স চালু করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেখবেন টেন্ডারবাক্স ছিনতাই আর শোনা যায় না। আমরা ধীরে ধীরে ই-টেন্ডারিংয়ে চলে যাচ্ছি। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় এখনো পিছিয়ে আছে, সেখানেও আমরা জোর দিয়েছি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দূর করে আমরা সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারি। সেই আমরা যেন আরো উন্নতভাবে কাজ করতে পারি। কাজের মান যেন ঠিক থাকে সেই দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠন থেকে শুরু করে বর্তমান সময়েও দেশের অগ্রযাত্রায় প্রকৌশলীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখন আমাদের বাজেট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আমাদের উন্নয়ন বাজেট প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার। বাজেট বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা প্রকৌশলীদের।