রোহিঙ্গাদের জন্য সাড়ে দশ কোটি ডলার দিবে যুক্তরাষ্ট্র
সাইফুর রহমান : যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সহায়তা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) আওতায় সাড়ে দশ কোটি মার্কিন ডলার দিবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এণামুর রহমান।
৩ মার্চ (রোববার) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
এসময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, অতিরিক্ত সচিব মোহসিন, অতিরিক্ত সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশের যু্ক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা বিল মোলার, তথ্য কর্মকর্তা কেভিন ডলিভার,পল ম্যাসন এবং ইনফরমেশন স্পেশালিস্ট মাহবুবুর রহমান।
এ সময়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তার অর্থ দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাবারের সংস্থান করা হবে। এতে করে বিদ্যমান মানবিক সহায়তা পরিমাণ বাড়ানো যাবে। এসবের মধ্যে থাকবে স্থানীয় বাজার থেকে খাবার কেনার জন্য ভাউচার সুবিধা, জীবন রক্ষা করার জন্য বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি এবং অসহায় শিশু আর গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী প্রসূতি নারীদের জন্য পুষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা দানকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। ২০১৭ সালের অগস্টে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্করাষ্ট্র এজন্য মোট প্রায় ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ কোটি ডলারের মতো ছিল বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় মানুষদের জন্য বিভিন্ন কর্মসুচি বাবদ।
তিনি বলেন, বাড়তি এই তহবিল বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া দশ লাখের বেশি শরণার্থী, বাংলাদেশের স্থানীয় এলাকাবাসী এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তথা এ অঞ্চলে বাস্তুচু্যত মানুষদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মানবিক সহায়তার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এ সহায়তার আওতায় তাদের জন্য সুরক্ষা, জরুরি, আশ্রয়, খাদ্য, পুষ্টি, পানীয় জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এনামুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীও যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলে উপকৃত হচ্ছে। সহায়তার এ অর্থ কক্সবাজারের ওইসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করছে। স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তহবিল বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রস্তুতি, অবকাঠামো এবং আশ্রয়ের ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য মানবিক সাহায্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমেও সহায়তা যোগাচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ২৩ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তরিত করা হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ, ঘর, সাইক্লোণ সেন্টার, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ বেড়িবাধ তৈর করা হয়েছে৷ শিঘ্রই আমরা তাদের সেখানে স্থানান্তরিত করতে পারবো।
তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে।
আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার একেবারেই কম। এজন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছি৷ তবে তারা আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ঠ। আগামী ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষ্য ৪ টি মহোরার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে আজ জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহোরা অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে সহায়তা হিসেবে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অর্থ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় ঘোষিত ২০১৯ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) জন্য দেওয়া ৬ কোটি ডলারের অতিরিক্ত। এতে করে ২০১৯ সালের জেআরপিকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার অঙ্ক দাঁড়াল সাড়ে দশ কোটি ডলারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। চরম দুর্ভোগের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য সীমান্ত ও হৃদয়ের দ্বার খুলে দিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যে উদারতা দেখিয়েছে আমরা তার প্রশংসা করি৷ আমরা সব সামর্থ্যবান দেশের প্রতি এই বৈশিক মানবিক সাহায্যে অবদান রাখার অাহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ভালো করছে। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার একেবারেই কম। বাংলাদেশ চাইলে আমরা এ খাতে সব সহায়তা দিবে বলে জানান তিনি