দু-বার চেষ্টায় সফলতার সম্ভাবনা বেশি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে প্রতি বছর যে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের প্রায় অর্ধেকই সফল হচ্ছেন দ্বিতীয়বারের চেষ্টায়।
পরপর দুই বছরে এইচএসসি উত্তীর্ণদের ভর্তির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে সদ্য পাস করা ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে। তারা বলছেন, যারা দুবার পরীক্ষা দিচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাচ্ছেন বেশি। ভাল বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটি প্রভাব ফেলছে।
এ কারণে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা দিলে নম্বর কেটে রাখার নিয়ম চেয়েছেন তারা।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বর্তমান নিয়ম বহাল রাখার পক্ষে।
চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার, চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
১ নভেম্বর শুক্রবার ‘ঘ’ ইউনিট (বিভাগ পরিবর্তন), ৮ নভেম্বর শুক্রবার ‘খ’ ইউনিট (মানবিক), ১৫ নভেম্বর শুক্রবার ‘গ’ (ব্যবসায় প্রশাসন), ২২ নভেম্বর শুক্রবার ‘ক’ ইউনিট (বিজ্ঞান) এবং ২৩ নভেম্বর শনিবার ‘চ’ ইউনিটের (চারুকলা) পরীক্ষা হবে।
গত বছর এই পাঁচ ইউনিট মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৬ শ’ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
গত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষার ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেসব পরীক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাদের প্রায় অর্ধেকেই এইচএসসি পাস করেছেন এক বছর আগে।
২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোট শিক্ষার্থীর ৪৪ শতাংশ, ২০১১-১২ শিক্ষাকর্ষে ৫০ শতাংশ এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র দীপ ভৌমিক গত বছর প্রথম চেষ্টাতেই ভর্তি হতে পেরেছিলেন। এবিসি নিউজ বিডিকে তিনি বলেন, “এইচ এস সি পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির পড়াশোনায় অনেক প্রার্থক্য। যারা সদ্য এইচ এস সি পাশ করছেন তারা প্রস্তুতির জন্য সময় পান মাত্র তিন মাস। কিন্তু যারা দ্বিতীয়বার অংশ নিচ্ছেন তারা ১৫ মাস সময় পান।”
প্রস্তুতির সময় কম পাওয়ায় সদ্য পাস করা অনেক মেধাবী শিক্ষার্র্থীও ভর্তি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না বলে দীপ মনে করেন।
দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে লেখাপড়া করছেন শিহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, “প্রথমবার অল্পের জন্য সুযোগ পাইনি।পরে বাধ্য হয়েই এক বছর নষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়ে দ্বিতয়বার চান্স পেয়েছি।”
তিনি মনে করেন, বুয়েট বা মেডিকেলের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করা উচিৎ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পাশাপাশি অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের বছর এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ নেই।
আর মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিলে এসএসসি ও এইচএসসির মোট স্কোর থেকে পাঁচ নম্বর কেটে রাখা হয়।
বুয়েটের রেজিস্ট্রার এ কে এম মাকসুদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “সদ্য এইচএসসি পাস শিক্ষার্থী এবং আগের বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেক প্রার্থক্য থাকে। তাছাড়া অনেকে আসন খালি করে ভালো বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে সমান সুযোগ দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।”
অবশ্য এ বিষয়ে একমত নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভোগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
এবিসি নিউজ বিডিকে তিনি বলেন, “আমরা চাই যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। একজন শিক্ষার্থী প্রস্তুতি নিয়ে যোগ্যতা অর্জন করে একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে (এমসিকিউ), তা যোগ্যতা যাচাইয়ের সঠিক পদ্ধতি নয় বলেও মত দেন এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, প্রথমে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু শিক্ষার্থীকে বাছাই করা উচিৎ। তারপর তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে বিভাগ নির্বাচন করতে হবে।
“একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করবে, সে বিষয়ে তার ন্যূনতম জ্ঞান না থাকলে তাকে দিয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, প্রথমবার অংশ নিয়ে হোক, অথবা দ্বিতীয়বার, ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত মেধাবীরাই উত্তীর্ণ হয়।
“কোনো শিক্ষার্থী প্রথমবার কোনো কারনে উত্তীর্ণ নাও হতে পারে। আমি তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে।”