‘অস্ত্র বা অস্ত্রসদৃশ্য বস্তু নিয়ে বিমান বন্দরের ভেতরে প্রবেশ অসমম্ভব’

সাইফুর রহমান : আসল বা খেলনা অস্ত্র, অস্ত্র সদৃশ্য কোন বস্তু, চাকু-ছোড়া বা গোলাবারুদ, লিকুইড কোন ধায্য পদার্থ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেতো নয়ই, দেশের অভ্যন্তরিন বিমান বন্দরের ভেতরে প্রবেশ বা আরোহন একেবারেই অসম্ভব, যদি না দায়িত্বরত কোন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বা কর্মীরা সহযোগিতা না করেন।

এবিসিসিউজবিডিকে গত শুক্রবার (৮ মার্চ) এমনটাই বলেছেন দেশের সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদ এবং উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-১৪৭’তে বাংলাদেশী এক অস্ত্রধারীর আরোহন ও ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং এর ৯ দিন পর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ১০ রাউন্ড গুলিসহ নাইনএমএম পিস্তল বিমানবন্দরের স্ক্যানিং ম্যাশিনে ধরা না পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এসব কথা বলেন সাবেক এই দুই সেনা কর্মকর্তা।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পলাশ নামের এই বিমান ছিনতাইকারী নিহত হন। এর ৯ দিন পর ৫ মার্চ সন্ধ্যায় নভোএয়ারের একটি আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে যান নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের প্রথম গেটের স্ক্যানার মেশিনের নজর এড়িয়ে ৯ এমএম পিস্তল আর ১০ রাউন্ড গুলিভর্তি ব্যাগসহ বিনা বাধায় স্ক্যানিং মেশিন পার হন তিনি। চাঞ্চল্যকর এ দুটি ঘটনায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের মোট ১১ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সামরিক বিশ্লেষক মো. আবদুর রশীদ বলেন, ‘যে বিমানবন্দর থেকে ছিনতাইকারি বিমানে আরোহন করেছিলো, সেটা কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানটিও আন্তর্জাতিক রুটের। আর ইলিয়াস কাঞ্চনের ঘটনাটি একই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরিন রুটের। দুই ক্ষেত্রেই কতটা নিরাপত্তা থাকার কথা? তার ওপর ছিনতাইয়ের ঘটনার দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যান। তাহলে ঐ দিন এই রুটে এবং বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার কথা। এর পর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক বিমানে অস্ত্রধারী যুবক কীভাবে প্রবেশ করলো, বা ইলিয়াস কাঞ্চনের অস্ত্র কেনো স্ক্যানিং মেশিনে শনাক্ত হলো না, তা আমার বোধগম্য নয়। শুধু এতটুকুই বলবো… এসবের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে সহযোগিতা ছাড়া অস্ত্র বা অস্ত্রসদৃশ্য বস্তু নিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ অসমম্ভব।

উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ এবিসিনিউজকে বলেন, ছিনতাইকারীর বহনকরা অস্ত্রটি আসল না খেলনা, সেটা এখানে বিবেচ্য নয়, কারণ নকলটা যদি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চোখ ফাকি দিতে পারে তাহলে আসলটা কী পারবে না? তাইতো ঘটেছে। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনেরটি তো আসল ছিলো!

হাসান মাসুদ বলেন, অস্ত্র সদৃশ্য কোন বস্তু, চাকু-ছোড়া বা গোলাবারুদ, লিকুইড কোন ধায্য পদার্থ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিমানেতো নয়ই, দেশের অভ্যন্তরিন বিমানেও আরোহন করা অসম্ভব। হ্য, সম্ভব…. যদি দায়িত্বরত কোন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বা কর্মী সহযোগিতা করেন। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটা তদন্তে নিশ্চয়ই বেড়িয়ে আসবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ