৩৪ বছরেও অবহেলিত বরিশাল বিমানবন্দর
সাইফুর রহমান, জ্যেষ্ঠ প্রতিরেবদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৫এপ্রিল ২০১৯) : বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রানওয়ের পাশে ৫০০ ফুট ফাঁকা জায়গা (স্পেস) থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বরিশাল বিমানবন্দরে আছে মাত্র ৩০০ ফুট জায়গা। বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে নেই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। অগ্নিনির্বাপণসহ উদ্ধার কার্যক্রমও মানসম্পন্ন নয়। বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীরও অরক্ষিত। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারে না।
সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার এমন অভাব সত্ত্বেও বরিশাল বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও ফ্লাইট সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৩৪ বছর আগে নির্মিত এই বিমানবন্দরে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি সংস্থা মিলিয়ে সপ্তাহে ১৪টি উড়োজাহাজ যাত্রী পরিবহন করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আকাশ থেকে শস্যখেতে কীটনাশক ছিটানোর কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৬৩ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে ‘প্ল্যান্ট প্রোটেকশন’ বন্দর হিসেবে দুই হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮৫ সালে এটিকে বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই থেকে দিনের বেলা ঢাকা-বরিশাল রুটে বাণিজ্যিক বিমানের চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ১৬০ দশমিক ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১০০ ফুট।
১৯৯৫ সালে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেও এখনো আক্ষরিক অর্থে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও যে সব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার ন্যূনতম এখানে গড়ে ওঠেনি। চালু হওয়ার ২৩ বছর পরেও নিরাপত্তার পাশাপাশি উন্নয়নের বিষয়টিও উপেক্ষিত। এখানে রানওয়ে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে সন্ধ্যার আগেই বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের দিকে কোনো ফ্লাইট বিলম্বিত হলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেক সময়ই পাইলটরা চরম ঝুঁকি নিয়ে রানওয়ে থেকে ফ্লাইট টেক অফ করাতে বাধ্য হন। আবার রানওয়ের সর্বত্র সিসি ক্যামেরা এবং পর্যাপ্ত মনিটর নেই।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এই বিমানবন্দরে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী রানওয়ে নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এই বিমান বন্দরে যে ধরনের উড়োজাহাজ (ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ মডেল) চলাচল করে তাতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য হতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মিটার এবং প্রস্থ কমপক্ষে ৪৫ মিটার। কিন্তু এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলেও প্রস্থ মাত্র ৩০ মিটার-যা প্রয়োজনের তুলনায় ১৫ মিটার কম। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় দুটি রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং (আরএফএফ) যান থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। এই বিভাগে ৮ জন কর্মীর স্থলে লোকবল আছে পাঁচজন। আবার কন্ট্রোল টাওয়ারে চারজন লোকবলের স্থলে আছেন মাত্র একজন। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন ৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে ২৪ জনই নিরাপত্তাকর্মী। এমন সীমাবদ্ধতার মাঝেই এই বিমানবন্দরে সপ্তাহে ১৪টি অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মী জানান, আইকাও এর নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো বিমান বন্দরের রানওয়ের পাশে ৫০০ ফুট ফাঁকা জায়গা (স্পেস) থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখানে আছে মাত্র ৩০০ ফুট। বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে এখনো অত্যাধুনিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন হয়নি। পাশাপাশি এখানের অগ্নিনির্বাপণের উদ্ধার কার্যক্রমও মানসম্পন্ন নয়। চার বছর আগে অগ্নিনির্বাপক ভবনের কাজ শুরু হলেও এখনো তা শেষ হয়নি।
বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কামরুল হাসান বলেন, বিমানবন্দরটিতে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যেই আমাদের কাজ চালাতে হচ্ছে। প্রাচীরগুলো জরুরিভাবে উঁচু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কন্ট্রোল টাওয়ারের আধুনিকায়ন, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা এবং রানওয়েতে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরার স্থাপন করতে হবে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারছে না। নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলের এই বিমানবন্দরটি একেবারেই অরক্ষিত।