রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর আজ, এগোয়নি বিচারকার্য
সাইফুর রহমান, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৪ এপ্রিল, ২০১৯) : দুজন আসামির পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। একই ঘটনায় ইমারত নির্মাণ আইনের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ আছে। কেবল রানা প্লাজা ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ঢাকা জেলার সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) দপ্তর থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ছয় বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।
প্রায় তিন বছর আগে হত্যার অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
ঢাকা জেলা পিপির দপ্তর থেকে গত রোববার বলা হয়েছে, অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আটজন আসামি হাইকোর্টে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে এই আটজনের পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আসে। ইতিমধ্যে ছয়জন আসামির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। কেবল সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে স্থগিতাদেশ বহাল আছে। রেফায়েত উল্লাহর স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আগামী ৯ মে পর্যন্ত। আর মোহাম্মদ আলীর পক্ষে আগামী জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ছয় বছরেও হত্যা এবং ইমারত নির্মাণ আইনের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও ভুক্তভোগীরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, রাজনৈতিক ফৌজদারি মামলা ছাড়া অন্য কোনো ফৌজদারি মামলায় রাষ্ট্রের স্পষ্টতই মাথাব্যথা নেই। এ কারণেই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রানা প্লাজা ভবনের হতাহতের ঘটনার এসব মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকবে। যত দিনে বিচারকাজ আবার শুরু হবে তত দিনে সাক্ষ্যপ্রমাণ আলামত অনেক কিছুই নষ্ট হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার বলেন, দুজন আসামির পক্ষে স্থগিতাদেশের কারণে হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিচারিক আদালতের সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁকে জানাতে পারতেন। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।
তবে ঢাকা জেলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, স্থগিতাদেশ থাকার কারণে রানা প্লাজা ধসের হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম যে বন্ধ আছে, তা চিঠি দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দপ্তরকে জানিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। তিনি শিগগিরই অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন।