একাধিক জটিলতায় পিছিয়ে মিল্কভিটা : প্রতিমন্ত্রী

সাইফুর রহমান: দুর্নীতির চক্র, মাথাভারি প্রশাসন ও গতিশীল নেতৃত্বের অভাবেই মিল্কাভিটা তারমূল গতি পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন এলজিয়আরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।

১৪ মে (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা)’এর বিশেষ সাধারণ সভা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন-২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’এর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন , আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতির চক্র, মাথাভারি প্রশাসন ও গতিশীল নেতৃত্বের অভাবেই মিল্কাভিটা তার মূল গতি পাচ্ছে না । সমবায় যারা করেন তারাই মূল শক্তি , বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ।

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সম্পদের সুষম বণ্টনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌছে দেয়া। যাতে শোষক শ্রেনী তৈরী না হয়। এজন্য তিনি সর্বক্ষেত্রে সিলিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।

১৯৭৫ সালে সামরিক জান্তা সবকিছু তছনছ করে দেয়। পরবর্তীতে যড়যন্ত্রের ফলে এই সমবায় ভিত্তিক দুগ্ধ খামার আক্রান্ত রয়েছে। তা না হলে যে পরিকল্পনা, যে নীতি, যে চিন্তা-ভাবনা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল, তা বাস্তবায়িত হলে মিল্ক ভিটার অবস্থা অন্য রকম হতো।

দীর্ঘ অপশাসনের পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বিগত দশ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মাথাপিছু আয় নিজস্ব সক্ষমতা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের মর্যাদা সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে সমবায়ের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না এবং তারই অন্তর্গত মিল্ক ভিটার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন ,দীর্ঘ দিন যাবৎ মিল্কভিটা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা পেয়েছি। এই নেতিবাচক ধারনা থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে ইতিবাচক জায়গায় নিয়ে আসা সম্ভব এবং সেটি নিয়ে আসতে হবে। আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী আমাদের জাতির জনক যার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছিল এবং সাথে সাথে তিনি আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এদেশের বাঙ্গালিরা একটি মেধাসম্পন্ন ও মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত হবে যার সকল ক্ষেত্রে এদেশ হবে একটি চমৎকার আবাসভূমি। আমরা জানি সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন এবং এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্থ, ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশকে উত্তরণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল এদেশ কিভাবে চলবে, তার চরিত্র কি হবে তার একটি নীতিমালা তৈরি করা। যাকে শাসনতন্ত্র বলা হয়। তাঁর যুগান্তকারী পদক্ষেপের মধ্যে ছিল অন্যতম ছিল এই মিল্ক ভিটা।

স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, আজকে আপনাদের যে কমিটি হবে যে চারজন পরিচালক নির্বাচিত হবে আমি আশা করি যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হবে। যে সমস্ত বাধা বা জটিলতার কারণে মিল্ক ভিটা এগোতে পারছে না সে সব সমস্যা অপসারিত করা হবে।

কিভাবে ট্যক্স কম দিয়ে এদেশে,ও গুটিকয়েক আমদানিকারক সংস্থা মাত্র গুড়োদুধে ৫% ট্যাক্স দিয়ে মিল্কভিটাকে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তিনি কিভাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে, কি সুচিন্তিত দক্ষতার মাধ্যমে, কি মানবিকতা দিয়ে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটি পরিপূর্ণ করতে হবে একটি মাস্টারপ্লান করতে হবে কিভাবে এগিয়ে যাব।

এখানে আগে ২লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদন হতো এখন সেটি ৯০ হাজার লিটার। প্রায় ৫০% কমে গেছে। এটা মেনে নেয়া যায়না । আমাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ৩ লক্ষ লিটার উৎপাদন করা উচিত ছিল। আমারা সেটি করতে পারি নাই। এখানে দুর্নীতির চক্র ভাঙতে হবে।প্রচারের অভাব ও দুর্বল মার্কেটিংয়ের কারণে মিল্ক ভিটা এগোতে পারছে না।কি কি সংকট চিহ্নিত করতে হবে সমাধানের দিক নির্দেশনা নিয়ে আমরা খুব শীর্ঘই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাব এবং বিদ্যমান গুড়োদুধের ট্যাক্স নিয়ে খামারিদের স্বার্থে , শিশেুদের স্বার্থে কথা বলব।

গুড়োদুধের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তখনকার সময়ে শিশুদের দুধের অভাবে যে মর্মান্তিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল এ থেকে পরিত্রানের জন্য শিশুরা যাতে সঠিকবাবে দুগ্ধ পেতে পারে সেজন্যই বঙ্গবন্ধু দ্রুত সমবায় ভিত্তিক মিল্ক ভিটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চিন্তা-চেতনা ছিল বাংলাদেশ হবে সমবায় ভিত্তিক, সমতা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র। কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি চাষাবাদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাজার ব্যবস্থা সমবায়ের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। একটি সুষম বন্টনের মধ্য দিয়ে চমৎকারভাবে একটি সমাজ পরিচালিত হবে। যার মূল শক্তি হবে জনগণ এবং পরিচালিত হবে সমবায়ের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ