উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় নির্বাচন কমিশন
আব্দুল্লা বিন আনোয়ার আজমী, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা : আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ নিয়ে সঙ্কট যেন ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ভূমিকা নিয়েও দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে সব মহলের।
বিশেষ করে গত কদিন ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নির্বাচন ইস্যুতে দেওয়া নানা রকম বক্তব্যে আরও ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কাজী রকিউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবে নাকি প্রস্থান ঘটবে বিচারপতি এমএ আজিজের কমিশনের মতো।
মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবদের সর্বশেষ বৈঠকে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বহাল রেখে নির্বাচন করার প্রত্যয়ে নতুন করে সঙ্কট ও সংশয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর গত সোমবার প্রথমবারে মতো মুখ খুললেন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ।
জাতীয় সংসদ বহাল রেখে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচন আনুষ্ঠান নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সংসদ রেখে নির্বাচন কঠিন ব্যাপার।
নবম সংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় পরবর্তী সংসদের জন্য নির্বাচনী তোড়জোড় বেড়েছে সব পক্ষেই। তবে নির্বচনী প্রস্তুতি নিলেও কার অধীনে আগামী নির্বাচন হবে তা নিয়ে সরকার ও বিরোধী জোট এখনো বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই শঙ্কায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কী ভূমিকা নেবে আর কীভাবেই বা তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করবে সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন কমিশন যদি কোনো নির্বাচনের আয়োজন করে তবে তা যেমন হবে অর্থহীন, তেমনি এমন একটি নির্বাচন দেশকে ভয়াবহ সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, দলীয় অথবা নির্দলীয় উভয় ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতিই তারা নিয়েছেন। এছাড়া আকস্মিকভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।
নির্বাচন কিমিশনার ব্রিগেডিয়ার. জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেছেন,দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ এ সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আশঙ্কা অমূলক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশন তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতির কথা বললেও তাতে আস্থা রাখতে পারছেন না বিশেষজ্ঞ মহল। তারা মনে করছেন, সামনে একটা কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে কমিশনকে এ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে কমিশন যতই মুখে প্রস্তুতির কথা বলুক না কেন, কাজটি যে খুবই কঠিন তা তারাও টের পাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। অথচ বর্তমান কমিশনের কিছু কিছু কাজ দেখে মনে হয়, তারা নিজেদের শক্তিশালি করার পরবির্তে দুর্বল করে তুলছেন। তাছাড়া, নির্বাচনের সময় সব পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে কমিশন নিশ্চিত করবে, তা এখনও অস্পষ্ট।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। তবে, একটি সফল নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য ভূমিকা থাকলেও সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা ছাড়া এ কাজে সফলতা আসবে না।