নানকের হাত ধরেই উত্থান রাজিবের
বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২০ অক্টোবর) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের হাত ধরে মাত্র সারে চার বছরেই নিজেকে বদলে ফেলেন র্যাবের হাতে আটক হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব। আলাদিনের চ্যারাগের মতই নানকের ঘষায় চায়ের টং-দোকানী থেকে হয়ে যান কাউন্সিলর। নিয়ন্ত্রণে নেন মোহাম্ম্দপুর, আদাবর ও শ্যামলী এলাকা। এর পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র ৫৪ মাসেই তিনি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ নয়, হয়ে যান বট গাছ। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। অভিযোগ প্রমানিত হলে কেউই ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবেন না। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেছেন, জনশ্রুত আছে, নানক ভাইয়ের হাত ধরেই এই এলাকায় রাজিবের উত্থান। যুবলীগে যোগ দেয়া এবং অবৈধ পথে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া। আমার মিছিলেও নাকি হামলা চালানো হয়েছিলো তারই নির্দেশে।
গতকাল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাসা থেকে তারেকুজ্জামান রাজিবকে গ্রেফতারের পর তার বাস ভবনেই প্রায় দেড় ঘন্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত থাকা র্যাব-১ এর একজন কর্মকর্তা (মেজর) এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা তার কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য। কিভাবে একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে মাত্র সারে চার বছরে এত্তো অর্থ সম্পদের মালিক হলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ এক অবিশ্বাস্য উত্থানের কাহিনী। হার মানাবে রুপ কথার গল্পের আলাদীনের চেরাগকেও।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রাজির কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে পুরো মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি ও ফ্ল্যাট দখল, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং-মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও আদাবরে কয়েকটি আলিশান ভবনে চালাতেন জুয়া ও ক্যাসিনো। মোহাম্মদপুরের বসিলা, ওয়াশপুর, কাটাসুর, গ্রাফিক্স আর্টস ও শারীরিক শিক্ষা কলেজ, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, বাঁশবাড়ী, মোহাম্মাদীয়া হাউজিং, শ্যামলী, আদাবর এলাকায় তৈরি করেন একচ্ছত্র আধিপত্য।
২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বিভিন্ন কারসাজি করে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে পরাজিত করে নানকের সহযোগিতায় যোগদেন যুবলীগে। এর পরই শুরু হয় তার মিশন।
জাহাঙ্গীর কবির নানকের হাত ধরে রাজিবের উত্থান এবং নানকসহ রাজিবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণমাধ্যমে যা লেখা হচ্ছে তার সবটাই কি সত্য? কিছু তো অতিরঞ্জিতও আছে। তবে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কেউই ছাড় পাবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে। জাহাঙ্গীর কবির নানকের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে যে কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমানিত হলে তিনি ছাড় পাবেন না। কেউই ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবেন না।
স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা -১৩) আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘কথা কম বললে শত্রু কম হয়। আমি সেই পথ অনুস্মরণ করছি। শুধু এতটুকু বলবো, মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে আমার মিছিলে যে হামলা ও গুলির ঘটনায় দুজন তরুন নিহত হয়েছিলো, তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন র্যাবের হাতে আটক হওয়া কাউন্সিলর রাজিব। কার নির্দেশে এমন হামলা হলো, তার কিন্তু তদন্ত হয়নি। আটকও হয়নি রাজিব।’
তিনি বলেন, ‘জনশ্রুত আছে, নানক ভাইয়ের হাত ধরেই এই এলাকায় রাজিবের উত্থান। যুবলীগে যোগ দেয়া এবং অবৈধ পথে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া। আমার মিছিলেও নাকি হামলা চালানো হয়েছিলো তারই নির্দেশে। এটা আমার কথা নয়, লোকে বলে।’