করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বই আপাতত সমাধান
ডেস্ক প্রতিবেদন, এবিসিনিউজবিডি (১ এপ্রিল ২০২০) : করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। গবেষকেরাও বলছেন, শুধু সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মানলেই করোনার সংক্রমণে অর্ধেক মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বীকৃত ওষুধ ও প্রতিষেধক এখনো উদ্ভাবিত হয়নি। তাই রোগ শনাক্তকরণে পরীক্ষা জোরদার করতে হবে। আর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার পাশাপাশি পরস্পরের মধ্যে কমপক্ষে ৩ ফুট বা ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়ানো, গণপরিবহন ব্যবহার না করার মতো বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই আপাতত সমাধান।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন। গত সোমবার এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ইউরোপের ১১টি দেশে সংক্রমণের হার ও চিকিৎসাব্যবস্থা ছাড়া সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আমলে নিয়ে মডেলটি দাঁড় করানো হয়েছে। এই দেশগুলো হলো ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়া। প্রতিবেদনে ওই ১১ দেশে সামাজিক দূরত্বসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কত মৃত্যু হতে পারত, তার একটি ধারণাগত হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
গাণিতিক মডেলের ফলাফলে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা মন্তব্য করেছেন, করোনা মহামারিতে চলতি বছর মারা যেতে পারে দুই কোটির মতো মানুষ। তবে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুনগুলো মানা না হলে মৃত্যু চার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি আরও আগে কড়াকড়িভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যেত, তাহলে ৩ কোটি ৮৭ লাখ মৃত্যু এড়ানো যেত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রতি জোর দিয়ে যাচ্ছে।
চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত ৯ জানুয়ারি চীনের বিজ্ঞানীরা নতুন ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে জানান, এটি সার্স রোগ ছড়ানো সার্স–করোনাভাইরাসের গোত্রের। গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। সংক্রমণ ঠেকাতে তত দিনে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। তারপরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত ১১ মার্চ কোভিড–১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের কারণে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ওই ১১ দেশে করোনার সংক্রমণে ৫৯ হাজার মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। সংক্রমণ ছড়ানোর হার একদম কমে আসা পর্যন্ত এসব পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে আরও অনেক মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে। প্রতিবেদনে চীনের পদক্ষেপের উদাহরণ টানা হয়েছে। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ২৩ জানুয়ারি কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের অন্যতম ছিল আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন করা। এতে ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করে। গত ১৯ মার্চ নাগাদ উহানে স্থানীয় সংক্রমণ শূন্যতে নেমে আসে।