নির্বাচন ২৪ জানুয়ারির মধ্যে
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নবম সংসদের শেষ অধিবেশনের শুরুতে সংবিধান অনুসারে আগামী নির্বাচনের সময় জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই প্রধান দলের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে সংসদের ১৯তম অধিবেশন, যা চলবে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত।
শোক প্রস্তাব পাসের পর সন্ধ্যায় অধিবেশন আগামী রোবাবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে অধিবেশনের সূচনা বক্তব্যে স্পিকার বলেন, এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি।
“মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
এর আগে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে চলতি অধিবেশনের মেয়াদ ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জানান, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদের কার্যক্রম আর থাকবে না।
সংবিধান অনুসারে ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ বহাল থাকলেও নির্বাচনের সময়ে কোনো অধিবেশন বসবে না বলে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ্ই অধিবেশনই হবে নবম সংসদের শেষ অধিবেশন।
নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার যে দাবি বিরোধী দল জানিয়ে আসছে, বাস্তবায়ন করতে হলে তা এই অধিবেশনেই করতে হবে; যদিও সরকারি দল এই দাবিতে সাড়া দেয়নি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আশু সঙ্কটের মধ্যে এ্ই অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূচনা বক্তব্যে স্পিকার আশা প্রকাশ করেন, সরকারি ও বিরোধী দল গঠনমূলক সমালোচনা ও বিতর্কের মাধমে সংসদকে কার্যরকর করবে।
গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরুর আগে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া কিংবা তার কোনো প্রতিনিধি এই বৈঠকে ছিলেন না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি চলতি অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে।
অন্যদিকে বর্তমান সংবিধান অনুসরণ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষপাতি আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সংসদে এসে প্রস্তাব তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বৃহস্পতিবার বলেছেন, তাদের দাবির বিষয়ে সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করেই তারা অধিবেশনে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যতটা ছাড় দেয়া দরকার, আমরা তা দিতে প্রস্তুত আছি।”
বিএনপি ইতোমধ্যে বলেছে, তারা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা তৈরি করছে।
হানিফ বলেন, “বিএনপি সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাব বা রূপরেখা না দিলে সংসদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।”
সংসদে আলোচনার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মঙ্গলবার বলেন, সংসদে বিতর্ক হতে পারে, আলোচনা নয়। তবে আলোচনা হতে পারে সংসদের কোনো কক্ষে।
এর একদিন বাদেই হানিফ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংসদ বা সংসদের বাইরে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
টানা ৮৩ দিন অনুপস্থিতির পর গত ৩ জুন সংসদে যোগ দেয় বিএনপিসহ বিরোধী দল। ২৪ কার্যদিবসের ওই অধিবেশনে বিরোধী দল উপস্থিত ছিল ২১ দিনই, ভাষণ দিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতাও।
প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অধিবেশন
কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশন প্রতিদিন বিকেল ৫টায় শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সাধারণ আলোচনা হবে।
ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা ও অন্যান্য প্রয়োজনে অধিবেশন মুলতবি রাখার দায়িত্ব স্পিকারের ওপর দেয়া হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, প্রধান হুইপ মো. আব্দুস শহীদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, মো. রহমত আলী, রাশেদ খান মেনন ও আব্দুল মতিন খসরু বৈঠকে অংশ নেন।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে যোগ দেন।
সংসদের এ অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন- এবিএম গোলাম মোস্তফা, শহীদুজ্জামান সরকার, মুজিবুল হক চুন্নু, জেডআইএম মোস্তফা আলী ও আশরাফুন্নেসা মোশাররফ।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে তালিকায় থাকা অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।
শোক প্রস্তাব
অধিবেশনের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সাংসদ গোলাম সবুর এবং সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ ইকরামুল হক, শাহ্ জাহাঙ্গীর কবীর, কে এম হেমায়েত উল্যাহ আওরঙ্গ, খলিলুর রহমান চৌধুরী ও আব্দুল ওয়াহাব খানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কোনো না কোনো সদস্য হারাচ্ছি। আর শোক প্রস্তাব নিতে হচ্ছে।”
গোলাম সবুরের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ওই এলাকার মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে।”
আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, আ স ম ফিরোজ, শাহরিয়ার আলম এবং জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন।