শ্রীপুরে ফোর মার্ডার, টাকা লুট করতেই ধর্ষণের পর হত্যা
সাইফুর রহমান, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৩০ এপ্রিল ২০২০) : মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে এমন খবরে প্রতিবেশীর বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে কয়েকজন। ২৩ এপ্রিল রাতে গ্রিল ভেঙে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে তারা। প্রথমে প্রবাসীর স্ত্রীকে জিম্মি করে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও হাতে-গলায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। চেহারা দেখে ফেলায় প্রথমে ধর্ষণ এরপর কুপিয়ে হত্যা করে। একইভাবে দুই মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। সবশেষ বাড়িতে থাকা প্রতিবন্ধী ছেলেকেও গলাকেটে হত্যা করে ভয়ংকর এই প্রতিবেশীরা।
২৯ এপ্রিল (বুধবার) বিকালে র্যাব সদরদপ্তর থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এর আগে রোববার একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পিবিআই। করোনা প্রভাবের মধ্যে একই পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কাজিম উদ্দিন, মো. বশির, মো. হানিফ, মো. হেলাল ও মো. এলাহি মিয়া। এর আগে গ্রেপ্তার হয় কাজিম উদ্দিনের ছেলে পারভেজ। এরা সবাই মাদকসেবী। তাছাড়া কেউ রিকশা চালক ও ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
গত ২৩ এপ্রিল শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মালয়েশিয়া প্রবাসী কাজলের স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমাসহ ওই দম্পতির মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ওরফে নূরা, হাওয়ারিন এবং ছেলে ফাদিলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে গত ২৪ এপ্রিল গৃহবধূর শ্বশুর আবুল হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
আসামিদের ধরতে মাঠে নামে র্যাব। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ওই বাড়ি থেকে লুট করা মালামাল ও আসামিদের পরিধেয় রক্তমাখা কাপড়, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, তিনটি লুঙ্গি এবং একটি আংটি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের দাবি, তারা সবাই মাদকসেবী। সবাই ভিকটিমের বাড়ির আশপাশে প্রতিনিয়ত জুয়া, মাদক সেবন ও আড্ডা দিত এবং তাদেরকে হয়রানি করত। গ্রেপ্তার কাজিমের ছেলে পারভেজ দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ির খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকত্রী ফাতেমার হাতে আটক হয়েছিল। সে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামি।
গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে জানিয়েছে, ঘটনার কয়েক দিন আগে তারা জানতে পারে প্রবাসী কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০/২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এমন খবরের ঘটনার ৫/৭ দিন আগে গ্রেপ্তার কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়ে ওই বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরে বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। সেই দলে কাজিমের ছেলে পারভেজও ছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল ভিকটিমদের বাড়ির পেছনের এলাকায় জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিঁড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। পরে অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পেছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পেছনের গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানান এবং তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া ৩০ হাজার টাকা বের করে দেন। পরে তারা ফাতেমার স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অন্যান্য রুমেও তারা লুটপাত চালাতে থাকে।
গ্রেপ্তার বশির ও এলাহিসহ আরও একজন প্রবাসীর বড় মেয়ে নুরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। আরেক আসামি বশিরসহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। পারভেজও এই হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করে। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, ফাতেমা ও তার মেয়েরা কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদেরকে হত্যা করা হয়।